
স্টাফ রিপোর্টার ::
সম্প্রতি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ ইউনিয়নের চালবন্দ পয়েন্ট এলাকায় স্থাপিত দৃষ্টিনন্দন ‘কৃষাণ চত্বর’ ভেঙে ফেলে কিছু লোক। এতে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে জনসাধারণের মাঝে। তারা ‘কৃষাণ চত্বর’ সংস্কার এবং কৃষকের ভাস্কর্য পুনঃনির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. সাদি উর রহমান সাদিদের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে এই দৃষ্টিনন্দন কৃষাণ চত্বর নির্মাণ করা হয়। এই কৃষাণ চত্বর নামে এলাকার পরিচয় বিস্তৃতি ঘটে। পাশে আছে একটি যাত্রী ছাউনি। সেটিও দৃষ্টি কাড়ে দর্শনার্থীদের। এভাবে উপজেলায় অনেকগুলো ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। যার ফলে উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানের সৌন্দর্য বর্ধিত হয়। তবে গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে রাতে একদল লোক কৃষাণ চত্বরের থাকা কৃষকের ভাস্কর্যটিও ভেঙে ফেলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ওই ভাস্কর্য ভাঙার একটি ভিডিও দেখা গেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন লোক হাতুড়ি দিয়ে ভাস্কর্যটি ভাঙছেন। এ সময় পেছন থেকে স্লোগান দিতে বলা হয়। এরপর ‘শেখ হাসিনার আস্তানা, বাংলাদেশে হবে না’, ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা, বাংলাদেশে হবে না’, ‘শাহজালালের তলোয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দেন সেখানে থাকা লোকজন।
এ ঘটনায় সুনামগঞ্জ জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় আলোচনা হয়। গ্রামবাংলার কৃষি ও কৃষকের ঐতিহ্য তুলে ধরতে নির্মাণ করা কৃষকের ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন অনেক বক্তা। এ প্রসঙ্গে সভায় উপস্থিত তৎকালীন পুলিশ সুপার আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খান বলেন, এটি দুঃখজনক। এটি নিয়ে কারও কোনো আপত্তি, মতামত থাকলে আমরা সেখানে আরও সুন্দর কিছু করতে পারতাম। এ বিষয়ে রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান তিনি। জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, শুধু কৃষকের ভাস্কর্য নয়, অন্য কোনো বিষয়েও যদি কারও কোনো মতভিন্নতা থাকে, তাহলে সেটি আমাদের জানাতে পারেন। আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সেটি নিয়ে আলোচনা করব। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। এভাবে ভাঙচুর করলে মানুষের মধ্যে একটা নেতিবাচক বার্তা যায়, আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে সবার সচেতন থাকা উচিত। এছাড়া কৃষকের ভাস্কর্যটি ভাঙচুরকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসও দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
এদিকে কৃষাণ চত্বর ভেঙে ফেলায় কৃষকসহ জনসাধারণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা কৃষাণ চত্বরটি পুনরায় নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
চালবন্দ এলাকার কৃষক মনির হোসেন বলেন, এই ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার কারণে আমাদের এলাকার কৃষক সমাজের সম্মান ক্ষুণœ করা হয়েছে। কৃষক সমাজকে খাটো করা হয়েছে। আমরা এই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
কৃষক দ্বীন ইসলাম বলেন, আমাদের এই ভাস্কর্য থাকায় চালবন্দ এলাকাকে নতুন করে পরিচিতি দিয়েছিল। কী দোষে এটা ভেঙে ফেলা হলো, তা আমাদের জানা নেই। এ সময় এলাকার কৃষক আব্দুল মান্নান, কৃষক জসিম উদ্দিন, কৃষক কামাল উদ্দিনসহ অনেকে এই ভাস্কর্যটি পুনঃরায় নির্মাণের দাবি জানান।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, চালবন্দ এলাকায় ভেঙে ফেলা কিষাণ চত্বরের সংস্কার বা মেরামত কাজ উপজেলা প্রকৌশলী করে। তাদের সাথে যোগাযোগ করলে জানতে পারবেন।
এ বিষয়ে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী একরামুল হোসেন জানান, এসব কাজ আমাদের করার কোনো বাজেট নেই, করিও না। গত ২২ সালে এটা নির্মাণ করেছিলেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার। তাদের নির্মাণ বাজেট আছে, সংস্কার বা মেরামতের ও বাজেট আছে। কারণ তারা রাজস্ব খাতে, এডিপি খাতে, হাটবাজার ইজারা খাতে আয় আছে। এসব খাত থেকে সংস্কার করার সুযোগ আছে।