
‘ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগে মাদ্রাসা সুপারের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ’ বাক্যটি একটি সংবাদপ্রতিবেদনের শিরোনাম। কী প্রমাণ করছে কিংবা কী প্রতিপন্ন করছে? মনে করা হয়, মাদ্রাসা যেহেতু ধর্মশিক্ষার পাদপীঠ, তাই সেখানে নারী সবচেয়ে নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকবে। কিন্তু বাস্তবে বিপরীত বাস্তবতা বিরাজ করছে কিছু কিছু স্থানে।
কুপ্রস্তাব তো মামুলি বিষয়, বছর কয়েক আগে অনৈতিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এক মাদ্রাসাছাত্রীকে মাদ্রাসা শিক্ষকদের অনৈতিক সিন্ডিকেটের শিকার হয়ে পুড়ে মরতে হয়েছিল, এবং সে ঘটনায় আন্দোলিত হয়েছিল সারাদেশ। তাছাড়া প্রতিনিয়ত ধর্ষণের ঘটনা তো ঘটছেই দেশজুড়ে এবং সেসব ঘটনা শেষ পর্যন্ত সমাজের মোড়ল-মাতবরদের আপোস-মীমাংসার ফাঁদে পড়ে বিচারহীনতার অতলগর্ভে তলিয়ে গিয়ে থিতিয়ে মরছে। মাঝপথে দুপয়সা উপরি কামিয়ে নিচ্ছেন মড়ল-মাতববররা এবং প্রকারান্তরে ধর্মের ভেতরের বিচারব্যবস্থার কবর রচনা করছেন স্বার্থোদ্ধারের ক্যারিসম্যাটিক পরাকাষ্ঠা ফলাতে ফলাতে।
আসলে সমাজটা শেষ পর্যন্ত মুক্তযৌনপ্রবণই থেকে গেছে, ধর্ষণ তারই বহিঃপ্রকাশ। তা না হলে একজন মাদ্রাসা শিক্ষক কী করে তাঁর ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দিতে সাহস করেন? যেখানে জিনার দ- হিসেবে মৃত্যুদ-কে ইসলাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, যদিও সেটা প্রমাণ করার শর্ত অত্যন্ত কঠিন, একসঙ্গে চারজন পুরুষ কিংবা আটজন নারী সাক্ষী চাই। এমতাবস্থায় কোনও দুর্মুখ যদি বলেই ফেলে যে, সমাজে যৌনতার অবদমনের রীতির বিপরীত প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ধর্ষণের রেওয়াজ প্রচলিত হয়েছে, তা হলে তার বিরুদ্ধে কী কোনও যুক্তিসঙ্গত যুক্তি দাঁড় করানো যায়? যুক্তি দাঁড় করানো হয় তো যায়, তবে সেটা খুব একটা সহজ নয় এবং সে চেষ্টাও আপাতত করছি না। সমাজজুড়ে আড়ালে আবডালে নারী নির্যাতনের এই সংস্কৃতিকে দমন করার উপায় বের করতে মানুষ বোধ করি ব্যর্থই হবে, একবিংশ শতাব্দীও পেরিয়ে যাবে সফল হবে না। কেবল বলি, মনে হচ্ছে যৌন অবদমনের নিরোধ সম্ভব না হলে কুপ্রস্তাব থেকে পরকীয়া কিংবা ধর্ষণ পর্যন্ত যাবতীয় সবকীছু অন্যায় নারীর বিরুদ্ধে প্রযুক্ত হতেই থাকবে। ভুলে গেলে চলবে না যে, সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিশ্চিতকরণের পদ্ধতির গর্ভে যৌনাবদমনের প্রকৃতিবিরোধী প্রবণতার উপউৎপাদ হলো এই ধর্ষণ। নারীর প্রতি পুরুষের কুপ্রস্তাব, পরকীয়া কিংবা ধর্ষণ নির্মূল করতে হলে এই সমস্যাটির নিরসনও মানুষকেই করতে হবে।