![](https://sunamkantha.com/public/postimages/67ae28dc076d1.jpeg)
এই বাক্যটি একটি দৈনিকের সম্পাদকীয়র শিরোনাম। কারণ হিসেবে মন্তব্য করা হয়েছে, “দুর্নীতির কারণে প্রচুর সম্ভাবনাময় এই সুজলা সুফলা দেশটির অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। দুর্নীতির লাগাম টানা গেলে এই দেশের পৃথবীর বুকে প্রভাবশালী রাষ্ট্র হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা ছিলো। আমাদের যে বিপুল জনগোষ্ঠী, যে সুফলা শস্যক্ষেত্র, পরিশ্রমী কৃষক, প্রাকৃতিক সম্পদ; এসবের সদ্ব্যবহার করে খুব সহজেই আমরা অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারি।” খুব সত্য ও সহজ কথা। কিন্তু এই সত্য ও সহজ কথার বিপরীতে একটি প্রচলিত কথা হলো, দেশের রাজনীতিক সমাজ যদি জনসমাজের (বেসরকারি পরিসরে বসবাসকারী মানুষ) সেবা না করে সদা আত্মস্বার্থে নিমগ্ন ও কোনও না কোন বিদেশি শক্তির তল্পিবাহকে পর্যবসিত হয়, তা হলে কথিত কাক্সিক্ষত উন্নতি কীছুতেই সম্ভব নয়।
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিৎ’, গণমাধ্যম থেকে এবংবিধ পরামর্শ বা সুপারিশ জাতীয় অনেক অনেক শিরোনামের উদ্ধৃতি দেওয়া কোনও কঠিন ব্যাপার নয়। মুদ্রিত পত্রিকা কিংবা আন্তর্জালিক মাধ্যমের বিশাল পরিসরে তার লক্ষ লক্ষ পুনরাবৃত্তি যে-কারও পক্ষে পাঠ করা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। বালকবেলায় একদা ‘সদা সত্য কথা বলিবে’ কিংবা ‘সততাই উৎকৃষ্ট পন্থা’ বাংলাভাষী মানব সন্তানদেরকে শেখানো হয়েছিল এখনও শেখানো হয়। বোধ করি বিশ্বের তাবৎ জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিতে এবংবিধ চর্চার রীতি প্রচলিত ছিল এবং আছে। এগুলোর যথার্থ চর্চা মানুষকে দুর্নীতিবিমুখ করে তোলে। কিন্তু পৃথিবীতে ব্যক্তিগত সম্পত্তির উৎপত্তির পর থেকে মানবসন্তানদের একাংশ এই সত্য ও সততার নীতিচর্চা পরিহার করে স্বীয় স্বার্থোদ্ধারে পৃথিবীর শাসনভার স্বহস্তে গ্রহণ করেছে এবং তৎপর পৃথিবীতে প্রতিনিয়িত সত্য ও সততার বিপরীত কা-কারখানা অর্থাৎ দুর্নীতির চর্চা পৃথিবীতে ঘটেই চলেছে, কীছুতেই নিবৃত্ত হচ্ছে না। অর্থাৎ ব্যক্তিগত সম্পত্তির অবসান না হলে দুর্নীতিরও অবসান নেই। মঙ্গলের পক্ষে রাজনীতি চর্চার কথা এখানে উঠছে না, অমঙ্গল ও অশান্তির উৎস রাজনীতির কথা এখানে প্রাধান্য পেয়েছে। সমাজবিজ্ঞানীরা এই সর্বাস্তৃত সকল অশুভ ও অমঙ্গলের উৎস অর্থাৎ দুর্নীতির সুশোভন নাম দিয়েছেন রাজনীতি, যে-রাজনীতির কল্যাণে পৃথিবী আজ সা¤্রাজ্যবাদী আর্থসামাজিক বিন্যাসকাঠামোর অভ্যন্তরে বৈশি^ক মন্দা ও আন্তঃসা¤্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব-সংঘাতে বিপন্ন এবং তৃতীয় বিশ^যুদ্ধের জন্যে অপেক্ষাপর, কুষ্ঠরোগীর মতো ধুঁকছে। পৃথিবীতে এমন দেশ আছে যে-দেশ সন্ত্রাস নির্মূলের ক্যারিসমা দেখিয়ে আরও ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস করেই চলেছে, আসলে এবংবিধ রাজনীতিক ক্যারিসমার একটাই লক্ষ্য বিশ^বাজার দখলে রাখা। কেবল চাই মুনাফা, চাই বাণিজ্য, চাই সম্পদ, চাই বিশ^জুড়া আধিপত্য। এই কারণে শান্তির নামে অশান্তির সৃষ্টিই কোনও কোনও রাষ্ট্রের রানীতিক আদর্শ। বিশে^র অবস্থাটা যখন এমন নির্বিকল্প পর্যায়ে এসে উপনীতি হয়েছে তখন বাংলাদেশের মতো দুর্বল দেশ তো দুর্নীতি উৎপাদনের প্রকৃষ্ট কারখানা হয়ে যেতেই পারে, এটাই স্বাভাবিক। এখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার আহ্বান জানানো আর পৌরসভার ময়লা পরিষ্কারের জন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ সমান কথা, ময়লার উৎস নির্মূলে যে-পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কোনও ভূমিকা থাকবে না, প্রকারান্তরে প্রতিদিন পর্যাপ্ত ময়লা জমবেই এবং পরিচ্ছন্নতার কাজও চলতেই থাকবে নিরন্তর। তাই বোধ করি সম্পাদকীয়তে এই সত্যটি প্রচার করা হয়েছে যে, ‘বস্তুত একেবারে শূন্য দুর্নীতিগ্রস্ত অবস্থায় পৌঁছা কোনোভাবেই সম্ভব নয়’। আমাদের মনে হয় এরপর ‘দুর্নীতি একবারে নির্মূলের পরিবর্তে নিয়ন্ত্রণ করে যত সম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা করাটাই হলো সর্বোত্তম কাজ’ এবংবিধ পরামর্শ উৎপাদনের কোনও সার্থকতা নেই। কারণ বেসরকারি পরিসরে স্বৈারাচারী শাসন-শোষণ, দলীয় ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও বহির্দেশীয় পরিকল্পনায় ক্ষমতার পালাবদল জায়মান থাকার জন্য দুর্নীতি যতোটুকু নির্মূল করা যাবে না ততোটুকুই যথেষ্ট।