![](https://sunamkantha.com/public/postimages/67ae278a31bd4.jpg)
স্টাফ রিপোর্টার ::
নৌপরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা নৌ-ধর্মঘট কর্মসূচি জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বৃহ¯পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নৌ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের সাথে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভায় নৌ পরিবহন শ্রমিক নেতারা তাদের ডাকা সারাদেশে নৌ-ধর্মঘট কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
মতবিনিময় সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় সভাপতির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। এ-সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পাল, সিলেট নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার ফালগুনী পুরকায়স্থ, সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোহাম্মদ জাকির হোসেন, বিআইডব্লিউটিএ সিলেটের উপপরিচালক শরীফ ইসলাম, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসেম, জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুশফিকীন নূর, নৌপরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম বেপারী, কার্গো ট্রলার বাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান হাবিব, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান হাওলাদার প্রমুখ।
সুনামগঞ্জের বিভিন্ন নদীপথে বিআইডব্লিউটিএ, পৌরসভা-উপজেলা পরিষদ কিংবা বিভিন্ন সমিতির নাম ভাঙিয়ে টোল আদায়ের নামে চাঁদা আদায় হচ্ছে ঘাটে ঘাটে। কখনও আবার নদীর মাঝখানে চলন্ত নৌকা থামিয়ে চাঁদা আদায় করা হয় এ ধরনের অভিযোগ তুলে নৌ শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে নৌ ধর্মঘটের ডাক দেয় নৌপরিবহন শ্রমিকরা। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে আসলে নৌপরিবহন শ্রমিকদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় বসেন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। এসময় তিনি শ্রমিকদের দাবিগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং সমাধানের আশ্বাস দেন। জেলা প্রশাসক শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে নৌপরিবহন শ্রমিক নেতারা নৌ-ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
নৌপরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম বেপারী বলেন, আমরা জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে সন্তুষ্ট। তিনি আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন সকল ধরনের সমস্যার সমাধান করবেন। তাই আমার আমাদের ডাকা নৌ-ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছি। আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে দাবি জানিয়েছি বিআইডব্লিউটিএ কিংবা টোল আদায়ের নামে যেন চলন্ত কোনো নৌকা থেকে টাকা আদায় না করা হয়। নদী পথে যেন চাঁদাবাজি বন্ধ করা হয় সেই দাবিও জানিয়েছি। আমরা আশা করি, আমাদের দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, মতবিনিময় সভায় যেসব আলোচনা হলো তাতে মনে হচ্ছে আমাদের কিছু কিছু জিনিস উল্লেখ করা দরকার যে, বিআইডব্লিউটিএর কয়টা ঘাট আছে, পৌরসভা কিংবা উপজেলা পরিষদের কয়টা ঘাট আছে। এসব ঘাটগুলো কি শর্তে নিবে, কতটুকু জায়গায় নিবে এগুলো ক্লিয়ার করা উচিত। বিষয়গুলো ক্লিয়ার থাকলে আমাদের সকলের কাজ করতে সুবিধা হবে। তখন আর বিভেদ থাকবে না। ঘাটে উল্লেখিত শর্ত না মানলে তখন তাদের বিরুদ্ধে সহজেই ব্যবস্থাও নেওয়া যাবে।
সিলেট নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার ফালগুনী পুরকায়স্থ বলেন, ধর্মঘটের দাবিগুলো যখন আমাদের কাছে যায় তখন আমরা তাদের অফিসে ডেকেছি, তারপর যেটা দেখলাম যে তাদের ১২ টা দাবি রয়েছে তার মধ্যে আমি ৪টা দাবি সিলেক্ট করেছি, প্রথমটি হলো যে অবৈধ স্থানে টাকা নেওয়া হয়। দ্বিতীয় যতটুকু নেওয়ার কথা তার থেকে বেশি নেওয়া হচ্ছে। তৃতীয় হিজড়া সম্প্রদায় যন্ত্রণা করে আর ৪ নাম্বার হচ্ছে নৌপুলিশ যন্ত্রণা করে এই দাবিগুলোই ছিলো মুখ্য। হিজড়াদেরকে নিয়ে আমরা বসবো, তাদের সাথে কথা বলবো। টাকা কোথায় কম নেওয়া হচ্ছে কোথায় বেশি নেওয়া হচ্ছে তা নিয়েও আলোচনা হবে। নৌপুলিশ যদি টাকা আদায়ের সাথে কিংবা নদী পথে নৌশ্রমিকদের কোনো ধরনের হয়রানি করে তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, নৌ পরিবহন শ্রমিকরা যে ধর্মঘট ডাক দিয়েছিলেন সেটি তারা প্রত্যাহার করেছেন। আমরাও তাদেরকে কথা দিয়েছি নদীপথের যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো দ্রুত সমাধান করার। বিআইডব্লিউটিএসহ বিভিন্ন ঘাটে যে টোল আদায় করা হয় তা নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। আমরা শ্রমিকদের কল্যাণে আমরা সর্বদা সচেষ্ট। তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণ করতে আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি।
তিনি আরও বলেন, নদীপথে কোন ধরনের চাঁদাবাজি করতে দেয়া হবে না। কেউ যদি নদীপথে চাঁদাবাজি করার চেষ্টা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। টোল আদায়ের নামেও যদি কেউ অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিব।