(পূর্ব প্রকাশের পর)
ব্যক্তি কর্তৃক দুর্নীতির অভিযোগে কোর্টে সরাসরি মামলা দায়ের :
সাদাসিদা পথে ক্ষতিগ্রস্ত কোন ব্যক্তি বা যে কোন ব্যক্তি কর্তৃক দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের তফসিল চিহ্নিত অপরাধের বিচার চেয়ে কোন মামলা কোর্টে দায়ের করা যায় না। বিধিমালার পঞ্চম অধ্যায়ের ১৩ নং ধারার ৩নং উপধারায় বলা হয়েছে আইনের তফসিলভুক্ত কোন অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে কোন অভিযোগ কোন ব্যক্তি কর্তৃক সরাসরি কোন আদালতে দায়ের করা যাবে না। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪, বিধিমালা ২০০৭ ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭ মূলত প্রয়োগ হয় ক্রিমিনাল ‘ল’ এমেন্ডমেন্ট এ্যাক্ট-১৯৫৮ তথা ১৯৫৮ সনের ৪০ নং আইনের বর্ণিত প্রক্রিয়ায়। কথিত ৪০ নং আইনের ৪(১) ধারায় বলা হয়েছে।
A special judge shall have jarisdicction within such teritorial limits as may be fixed by the government by notification in the official gazzette and may take cognizance of any offence committed or deem to have been committed within such limits and triable under this act upon reciving a complaint of facts which constitiute such offence or report in writing of such facts made by any police officer.
উল্লেখিত বিধিমালা ও এর ৪৯ বৎসর পূর্বের আইন আপাত দৃষ্টিতে সাংঘর্ষিক মনে হলেও কার্যত তা নয়। বিধিমালার বর্ণিত ৩ ধারার পর পরই আরো উল্লেখ আছে, “তবে শর্ত থাকে যে, যদি কোন উপযুক্ত আদালত এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, অভিযোগকারী উক্ত অপরাধ সংঘটন সংক্রান্ত অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন বা উহার কোন কার্যালয়ে কিংবা থানায় গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করে ব্যর্থ হয়েছেন সেক্ষেত্রে উক্ত আদালত অভিযোগটি গ্রহণ করে উহা তদন্তের জন্য কমিশনকে নির্দেশ দিতে পারবেন।”
পর্যালোচনাক্রমে দেখা যায় কমিশনের জেলা, বিভাগীয় বা প্রধান অফিসে অভিযোগ সম্বলিত দরখাস্ত পেশ করলে তা যাচাই-বাছাই পর্ব শেষে অনুসন্ধান স্তরে পৌঁছে। অনুসন্ধানের অনেকগুলি সিঁড়ি বেয়ে প্রারম্ভিক সত্যতা আবিষ্কৃত হলে দায়ের হবে মামলা। অর্থাৎ দুদকের কোন ডেপুটি এসিসটেন্ড বা এসিসটেন্ট ডাইরেক্টর এজাহারকারী হয়ে থানায় এজাহার রুজু করবে। তারপর শুরু হবে তদন্তের পালা। অন্যদিকে, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যে কোন ব্যক্তির দরখাস্তে দুদক আইনের তফসিলভুক্ত অপরাধ পেলে সেই ভিত্তিতে এজাহার রুজু করে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে তদন্তের ব্যবস্থার জন্য পাঠিয়ে দিলে দুদক সরাসরি তদন্তে পৌঁছে মামলার তদন্তকাজ শুরু করবে। অন্যপন্থা হলো যদি কোন ব্যক্তি দুদকের যে কোন স্তরের কার্যালয়ে দরখাস্ত করে থাকে কিন্তু তার কোন সাড়া শব্দ পায় না বা দরখাস্ত লিখে থানায় যায়, থানা কর্তৃপক্ষ কোন সাড়া দেয় না অথবা এজাহার করতে অপারগ বলে অবগত করে তাহলে ব্যক্তির জন্য পথ খুলে যায়। দুই দুয়ারের যে কোন এক দুয়ারে ধর্ণা দিয়ে দুয়ার খুলতে না পারলে ফিরে আসা ব্যক্তিটি তার অবস্থা বর্ণনা করে সরাসরি সিনিয়র ¯েপশাল জজ আদালতে ফরিয়াদী সেজে নালিশ আকারে মামলা রুজু করতে পারে। সিনিয়র স্পেশাল জজ যেহেতু দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ আমলে নেবার একক ক্ষমতাধারী সেহেতু তিনি নালিশকারী বা ফরিয়াদীর প্রারম্ভিক জবানবন্দি গ্রহণ করে নালিশটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিশনকে নির্দেশ দেবেন। কমিশন নির্দেশ মোতাবেক তদন্ত করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় রিপোর্ট দাখিল করবে। দুদক তফসিলভুক্ত কোন অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে কোন আদালতে সরাসরি মামলা করা যাবে না, একথা সরাসরি সত্যি নয়। এখানে আইন ও বিধির মারপ্যাঁচ বুঝার আছে। বিধিমালার ১৩ (৩) বিধির প্রোভাইসোতে উল্লেখিত উপযুক্ত আদালত বলতে সিনিয়র স্পেশাল জজ বুঝানো হয়েছে। এই মারপ্যাঁচ অনেক আইনজীবীও বুঝে উঠতে পারেন না। তাই হরহামেশা পত্রিকায় দেখা যায়, অমুক সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বা আমল গ্রহণকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভ্রান্ত পথে দায়েরী এসব মামলার অদৃষ্ট আর বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। দুর্নীতিকে কঠোর হস্তে দমনে নিকট অতীতের কোন সরকার বা বিগত আওয়ামী লীগ সরকার মরিয়া ছিল না। এ কারণেই দুর্নীতির মামলা দায়েরে এতো জটলার সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে।
দুর্নীতির অপরাধ বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন :
কালের প্রবাহে দুর্নীতি অপরাধ : বিংশ শতাব্দির মধ্যভাগে “দুর্নীতি” অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হলেও অপরাধটি তখনও সর্বব্যাপী ছিল না। জমিদারি ভিত্তিক সামন্ততান্ত্রিক সমাজে ততবেশি সরকারি কর্মচারীর প্রয়োজন ছিল না। সরকারি কর্মচারীহীন সমাজে দুর্নীতির সুযোগ কম। সে অবস্থায় রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণে দুর্নীতি নামক অপরাধকে অতটা গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। শুধু বিশেষভাবে চিহ্নিত করে বিশেষায়িত আদালতের মাধ্যমে বিচারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। এখন আর সেখানে অবস্থানের সুযোগ নেই। দুর্নীতির অপরাধ বিস্তৃত হয়েছে মৃত্তিকায়, আকাশে ও পাতালে। এখন রাষ্ট্রের স¤পদের মালিক জনগণ। জনগণের মালিকানাভিত্তিক স¤পদের রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রতিপালন করে জনগণেরই একাংশ। এই অংশ যদি জনগণের স¤পত্তির ধারক, বাহক ও প্রতিপালক অবস্থায় নিজের স্বার্থে বা অপরের স্বার্থ হাসিল করে দেয়ার জন্য ন্যূনতম জনস্বার্থ ক্ষুণœ করে অন্যায় লাভ বা লাভের চেষ্টা করে তবেই দুর্নীতির অপরাধ সাধন হয়। দেশের স্বার্থে দেশবাসীর প্রয়োজনে যদি বিমান ক্রয় করতে যেয়ে ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ কমমূল্যের বিমান বেশী মূল্যে ক্রয় দেখিয়ে নিজের পকেটভারীকরণে মত্ত হন তাহলে সেখানে দুর্নীতির অপরাধ সংঘটিত হবে। এ ধরনের অপরাধকে আকাশ ছোঁয়া দুর্নীতি বললে অত্যুক্তি হবে না।
দেশের খনিজ স¤পদ নিয়ে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের কথা প্রায়শই শোনা যায়। বহুজাতিক কো¤পানির সাথেমিলে মিশে জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে তেল, গ্যাস, কয়লা এবং সমুদ্র উপকূল ও সমুদ্রের নিচের স¤পদ নিয়ে যে দুর্নীতি হয় তাকে পাতাল দুর্নীতি হিসেবে চিহ্নিত করতে অসুবিধা কোথায়?
আকাশ-পাতালের দুর্নীতিতো অনেক সীমাবদ্ধ। ভূমি সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি সীমাহীন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জনস্বার্থে নানাবিধ ক্রয়-বিক্রয়ের প্রয়োজন হয়। ক্রয় ক্ষেত্রে জনস্বার্থের বিপরীতে ব্যক্তি, দল, আত্মীয় ও কোটাবী স্বার্থে অন্যায় লাভের অনেক ঘটনা ঘটে বা পরিকল্পিতভাবে করে ঘটানো হয়েছে। এসব ঘটনা দুর্নীতির অপরাধ সংঘটন করে।
জনগণের কল্যাণে সরকার গঠনের জন্য নির্বাচন করা হয়। সরকার পরিবর্তনশীল। দেশ পরিচালনার জন্য দেশে অপরিবর্তনশীল একটি প্রশাসনিক কাঠামো রয়েছে। এই প্রশাসনিক কাঠামো বা রাষ্ট্রযন্ত্রকে চালনা করে সরকার। সরকার কর্তৃক চালিত অবস্থায় অপরিবর্তনশীল রাষ্ট্রযন্ত্রের ধারক বাহক ও সরকার মিলে মিশে কাজ করেন জনকল্যাণের নিমিত্তে। জনকল্যাণ ভূলুণ্ঠিত হলে কিংবা জনস্বার্থের পরিপন্থী ক্ষতিকর ও অলাভজনক ক্রিয়া-কর্ম স¤পাদিত হলে সেজন্য দুর্নীতির অপরাধে সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্রের অপরিবর্তনশীল দায়িত্ববানরা একত্রে দোষী সাব্যস্ত হন। এই দোষ ও অপরাধের রকম ফের আছে। (চলবে)
ব্যক্তি কর্তৃক দুর্নীতির অভিযোগে কোর্টে সরাসরি মামলা দায়ের :
সাদাসিদা পথে ক্ষতিগ্রস্ত কোন ব্যক্তি বা যে কোন ব্যক্তি কর্তৃক দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের তফসিল চিহ্নিত অপরাধের বিচার চেয়ে কোন মামলা কোর্টে দায়ের করা যায় না। বিধিমালার পঞ্চম অধ্যায়ের ১৩ নং ধারার ৩নং উপধারায় বলা হয়েছে আইনের তফসিলভুক্ত কোন অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে কোন অভিযোগ কোন ব্যক্তি কর্তৃক সরাসরি কোন আদালতে দায়ের করা যাবে না। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪, বিধিমালা ২০০৭ ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭ মূলত প্রয়োগ হয় ক্রিমিনাল ‘ল’ এমেন্ডমেন্ট এ্যাক্ট-১৯৫৮ তথা ১৯৫৮ সনের ৪০ নং আইনের বর্ণিত প্রক্রিয়ায়। কথিত ৪০ নং আইনের ৪(১) ধারায় বলা হয়েছে।
A special judge shall have jarisdicction within such teritorial limits as may be fixed by the government by notification in the official gazzette and may take cognizance of any offence committed or deem to have been committed within such limits and triable under this act upon reciving a complaint of facts which constitiute such offence or report in writing of such facts made by any police officer.
উল্লেখিত বিধিমালা ও এর ৪৯ বৎসর পূর্বের আইন আপাত দৃষ্টিতে সাংঘর্ষিক মনে হলেও কার্যত তা নয়। বিধিমালার বর্ণিত ৩ ধারার পর পরই আরো উল্লেখ আছে, “তবে শর্ত থাকে যে, যদি কোন উপযুক্ত আদালত এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, অভিযোগকারী উক্ত অপরাধ সংঘটন সংক্রান্ত অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন বা উহার কোন কার্যালয়ে কিংবা থানায় গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করে ব্যর্থ হয়েছেন সেক্ষেত্রে উক্ত আদালত অভিযোগটি গ্রহণ করে উহা তদন্তের জন্য কমিশনকে নির্দেশ দিতে পারবেন।”
পর্যালোচনাক্রমে দেখা যায় কমিশনের জেলা, বিভাগীয় বা প্রধান অফিসে অভিযোগ সম্বলিত দরখাস্ত পেশ করলে তা যাচাই-বাছাই পর্ব শেষে অনুসন্ধান স্তরে পৌঁছে। অনুসন্ধানের অনেকগুলি সিঁড়ি বেয়ে প্রারম্ভিক সত্যতা আবিষ্কৃত হলে দায়ের হবে মামলা। অর্থাৎ দুদকের কোন ডেপুটি এসিসটেন্ড বা এসিসটেন্ট ডাইরেক্টর এজাহারকারী হয়ে থানায় এজাহার রুজু করবে। তারপর শুরু হবে তদন্তের পালা। অন্যদিকে, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যে কোন ব্যক্তির দরখাস্তে দুদক আইনের তফসিলভুক্ত অপরাধ পেলে সেই ভিত্তিতে এজাহার রুজু করে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে তদন্তের ব্যবস্থার জন্য পাঠিয়ে দিলে দুদক সরাসরি তদন্তে পৌঁছে মামলার তদন্তকাজ শুরু করবে। অন্যপন্থা হলো যদি কোন ব্যক্তি দুদকের যে কোন স্তরের কার্যালয়ে দরখাস্ত করে থাকে কিন্তু তার কোন সাড়া শব্দ পায় না বা দরখাস্ত লিখে থানায় যায়, থানা কর্তৃপক্ষ কোন সাড়া দেয় না অথবা এজাহার করতে অপারগ বলে অবগত করে তাহলে ব্যক্তির জন্য পথ খুলে যায়। দুই দুয়ারের যে কোন এক দুয়ারে ধর্ণা দিয়ে দুয়ার খুলতে না পারলে ফিরে আসা ব্যক্তিটি তার অবস্থা বর্ণনা করে সরাসরি সিনিয়র ¯েপশাল জজ আদালতে ফরিয়াদী সেজে নালিশ আকারে মামলা রুজু করতে পারে। সিনিয়র স্পেশাল জজ যেহেতু দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ আমলে নেবার একক ক্ষমতাধারী সেহেতু তিনি নালিশকারী বা ফরিয়াদীর প্রারম্ভিক জবানবন্দি গ্রহণ করে নালিশটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিশনকে নির্দেশ দেবেন। কমিশন নির্দেশ মোতাবেক তদন্ত করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় রিপোর্ট দাখিল করবে। দুদক তফসিলভুক্ত কোন অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে কোন আদালতে সরাসরি মামলা করা যাবে না, একথা সরাসরি সত্যি নয়। এখানে আইন ও বিধির মারপ্যাঁচ বুঝার আছে। বিধিমালার ১৩ (৩) বিধির প্রোভাইসোতে উল্লেখিত উপযুক্ত আদালত বলতে সিনিয়র স্পেশাল জজ বুঝানো হয়েছে। এই মারপ্যাঁচ অনেক আইনজীবীও বুঝে উঠতে পারেন না। তাই হরহামেশা পত্রিকায় দেখা যায়, অমুক সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বা আমল গ্রহণকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভ্রান্ত পথে দায়েরী এসব মামলার অদৃষ্ট আর বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। দুর্নীতিকে কঠোর হস্তে দমনে নিকট অতীতের কোন সরকার বা বিগত আওয়ামী লীগ সরকার মরিয়া ছিল না। এ কারণেই দুর্নীতির মামলা দায়েরে এতো জটলার সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে।
দুর্নীতির অপরাধ বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন :
কালের প্রবাহে দুর্নীতি অপরাধ : বিংশ শতাব্দির মধ্যভাগে “দুর্নীতি” অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হলেও অপরাধটি তখনও সর্বব্যাপী ছিল না। জমিদারি ভিত্তিক সামন্ততান্ত্রিক সমাজে ততবেশি সরকারি কর্মচারীর প্রয়োজন ছিল না। সরকারি কর্মচারীহীন সমাজে দুর্নীতির সুযোগ কম। সে অবস্থায় রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণে দুর্নীতি নামক অপরাধকে অতটা গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। শুধু বিশেষভাবে চিহ্নিত করে বিশেষায়িত আদালতের মাধ্যমে বিচারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। এখন আর সেখানে অবস্থানের সুযোগ নেই। দুর্নীতির অপরাধ বিস্তৃত হয়েছে মৃত্তিকায়, আকাশে ও পাতালে। এখন রাষ্ট্রের স¤পদের মালিক জনগণ। জনগণের মালিকানাভিত্তিক স¤পদের রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রতিপালন করে জনগণেরই একাংশ। এই অংশ যদি জনগণের স¤পত্তির ধারক, বাহক ও প্রতিপালক অবস্থায় নিজের স্বার্থে বা অপরের স্বার্থ হাসিল করে দেয়ার জন্য ন্যূনতম জনস্বার্থ ক্ষুণœ করে অন্যায় লাভ বা লাভের চেষ্টা করে তবেই দুর্নীতির অপরাধ সাধন হয়। দেশের স্বার্থে দেশবাসীর প্রয়োজনে যদি বিমান ক্রয় করতে যেয়ে ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ কমমূল্যের বিমান বেশী মূল্যে ক্রয় দেখিয়ে নিজের পকেটভারীকরণে মত্ত হন তাহলে সেখানে দুর্নীতির অপরাধ সংঘটিত হবে। এ ধরনের অপরাধকে আকাশ ছোঁয়া দুর্নীতি বললে অত্যুক্তি হবে না।
দেশের খনিজ স¤পদ নিয়ে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের কথা প্রায়শই শোনা যায়। বহুজাতিক কো¤পানির সাথেমিলে মিশে জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে তেল, গ্যাস, কয়লা এবং সমুদ্র উপকূল ও সমুদ্রের নিচের স¤পদ নিয়ে যে দুর্নীতি হয় তাকে পাতাল দুর্নীতি হিসেবে চিহ্নিত করতে অসুবিধা কোথায়?
আকাশ-পাতালের দুর্নীতিতো অনেক সীমাবদ্ধ। ভূমি সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি সীমাহীন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জনস্বার্থে নানাবিধ ক্রয়-বিক্রয়ের প্রয়োজন হয়। ক্রয় ক্ষেত্রে জনস্বার্থের বিপরীতে ব্যক্তি, দল, আত্মীয় ও কোটাবী স্বার্থে অন্যায় লাভের অনেক ঘটনা ঘটে বা পরিকল্পিতভাবে করে ঘটানো হয়েছে। এসব ঘটনা দুর্নীতির অপরাধ সংঘটন করে।
জনগণের কল্যাণে সরকার গঠনের জন্য নির্বাচন করা হয়। সরকার পরিবর্তনশীল। দেশ পরিচালনার জন্য দেশে অপরিবর্তনশীল একটি প্রশাসনিক কাঠামো রয়েছে। এই প্রশাসনিক কাঠামো বা রাষ্ট্রযন্ত্রকে চালনা করে সরকার। সরকার কর্তৃক চালিত অবস্থায় অপরিবর্তনশীল রাষ্ট্রযন্ত্রের ধারক বাহক ও সরকার মিলে মিশে কাজ করেন জনকল্যাণের নিমিত্তে। জনকল্যাণ ভূলুণ্ঠিত হলে কিংবা জনস্বার্থের পরিপন্থী ক্ষতিকর ও অলাভজনক ক্রিয়া-কর্ম স¤পাদিত হলে সেজন্য দুর্নীতির অপরাধে সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্রের অপরিবর্তনশীল দায়িত্ববানরা একত্রে দোষী সাব্যস্ত হন। এই দোষ ও অপরাধের রকম ফের আছে। (চলবে)