গত রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) তারিখে দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদপ্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘দিরাইয়ে হাওর উৎসব ॥ হাওরের পরিকল্পিত উন্নয়নে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি’। হাওর নিয়ে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবিটি আজকের নয়, বেশ পুরনো। অতীতে সুনামগঞ্জের অনেক প্রথিতযশা রাজনীতিক,
সাংবাদিক ও জনসমাজের প্রতিনিধিরা এই দাবি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সোচ্চার হয়েছেন এবং যথারীতি তা উপেক্ষিত হয়েছে।
বেসরকারি পরিসরে কোনও উন্নয়নমূলক কাজই এই দেশে গ্রহণ করা হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটি সরকারি পরিসরের কোনও না কোনও স্বার্থাদ্ধোরে অনুকূল হয়ে উঠে। তাই যখন ‘হাওরের পরিকল্পিত উন্নয়নে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি’ নিয়ে উৎসব হচ্ছে তখন কারও কারও কপালে ভাঁজ পড়ছে এই ভেবে যে, বোধ করি এতোকাল পরে কোনও স্বার্থদ্ধোরের মওকা উপজিত হয়েছে হাওর উন্নয়নকর্ম বাস্তবায়নের পরিসরে।
আমাদের দেশে সরকারি পরিসরে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতা একটি বহুল চর্চিত ও বিখ্যাত সংস্কৃতি এবং তার পরিসরে থাকে জনগণের ঊর্ধ্বে অধিষ্ঠিত থেকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা, বাহ্যিক অনুষ্ঠানসর্বস্বতা, অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ ও অধিপতি শ্রেণির বিশেষ বিশেষ কাজ চালাবার যন্ত্র হয়ে উঠার প্রাণান্ত প্রয়াস। অনেক অনেক প্রমাণের মধ্যে বিশেষ একটি প্রমাণ হিসেবে সরকারি প্রযতেœ টাঙ্গুয়ার হাওরের মরণাপন্ন অবস্থায় পর্যবসিত হওয়ার দৃষ্টান্ত উপস্থিত করা যায়।
‘হাওরের পরিকল্পিত উন্নয়নে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি’ নিয়ে উৎসব করার পরিপ্রেক্ষিতে এবংবিধ বিরূপ ভাবনার উদ্রেক হতেই পারে হাওরের মানুষজনের কারও কারও মনে। প্রবাদ আছে, ঘরপুড়া গরু সিঁদুর দেখলেও পায়। আমরা এমন বিরূপ ভাবনাকে আপাতত পাত্তা দিতে চাই না। সরকারি পরিসরের প্রতিনিধিরা হাওর উন্নয়নে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন, তার জন্যে তাঁদেরকে অভিনন্দনও ধন্যবাদ জানাই। আসলে হাওরাঞ্চলে পলি ব্যবস্থাপনা, মাছ চাষ, বৃক্ষরোপণ ও গ্রাম নিসর্গের পর্যায়ে পর্যটনের বিস্তার কে না চায়। একজন বলেছেন, ‘উজান থেকে প্রতিবছর এক বিলিয়ন টন পাথর, নুড়ি, বালু নেমে আসে। এতে হাওর, নদী, খাল, জলাভূমি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এই পলি ব্যবস্থাপনা করতে না পারলে ৫০ বছর পর বাংলাদেশ মরুভূমি হয়ে যাবে। নদী, হাওর ও জলাভূমির নাব্যতা বাড়াতে হবে। তাহলে মাছ বাড়বে, জলজ উদ্ভিদ বাড়বে। পানি থাকলে পর্যটনের বিকাশ ঘটবে।’ তার কথার সূত্র ধরে আমরা বলতে চাই, উজান থেকে নেমে আসা ‘এক বিলিয়ন টন পাথর, নুড়ি, বালু’কে উন্নয়নমূলক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করে প্রকৃতির আশীর্বাদ করে তোলা হোক। যদি তা না করা যায় তবে দেশের জন্যে এই বিলিয়ন টন পাথর-নুড়ি-বালু-পলিই সর্বনাশা অভিশাপ হয়ে দেখা দেবে। কাজেই সহজেই বোধোদয় হচ্ছে যে, প্রতিবছর নেমে আসা বিলিয়ন টন পাথর, নুড়ি, বালু ও পলিকে দেশের উন্নয়নমূলক কাজে লাগানার কাজে বাংলাদেশকে ব্যর্থ হলে চলবে না।