শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি ::
হাওরের আফাল ডিঙে লাউগাঙের (পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের উমেদনগর) মানুষের বেঁচে থাকার জীবন্ত গল্প বলছিলেন আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিক ও গীতিকবি ইশতিয়াক রুপু। ‘শহুরে যান্ত্রিক মানুষের কাছে গ্রামগুলো বিধবা নারীর মতো গুরুত্বহীন’ বলে আক্ষেপ করেছেন অধ্যাপক এনামুল কবির। হোমিও চিকিৎসক হাজি ডা. শাকিল মুরাদ আফজল সভাপতির বক্তব্যে বললেন, সাহিত্য বেঁচে থাকুক অনাদিকাল। পাগলাবাজার থেকে সাহিত্যের ছোট কাগজ তরু তার কলেবর আরো বাড়িয়ে চলুক ইয়াকুব শাহরিয়ারের হাত ধরে।
পাগলা সরকারি মডেল হাইস্কুল এন্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বললেন, সুনামগঞ্জ অঞ্চল লোকসাহিত্যে ভরপুর। সাহিত্যপ্রেমী মানুষের সাথে থাকতে পারাটাও আনন্দের ও গৌরবের।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা বাজার থেকে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা তরু পরিবারের চা চক্রকে এমনসব আলোচনার মধ্য দিয়ে প্রাণবন্ত করে তুলেছিলেন তারা। চা চক্র অনুষ্ঠিত হয় পাগলা বাজারে, তরুর কার্যালয়ে। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন তরু স¤পাদক ইয়াকুব শাহরিয়ার।
চা চক্রের আলোচনায় ইশতিয়াক রুপু বলেন, একটি প্রজন্ম ক্রমশ বখে যাচ্ছে। এই প্রজন্মকে আমি ‘হোন্ডা বাহিনী’ ছাড়া আর কিছুই বলতে চাই না। তাদেরকে বাঁচাতে হবে। শিক্ষিত করতে হবে, মানবিক ও সামাজিক শিক্ষায় আগ্রহী করে গড়ে তুলতে হবে। মাথায় সাহিত্যের রস ঢুকিয়ে দিতে হবে। নিজ নিজ গ্রামের প্রতি মায়াময়ী করে তুলতে হবে। তাঁর আলোচনায় সুনামগঞ্জের প্রতিথযশা সব লেখকদের স্মরণ করেন তিনি। নিজ গ্রাম লাউগাঙকে উমেদনগর বলতে চান না এই লেখক। লাউগাঙ থেকে পাগলা বাজার হয়ে সুনামগঞ্জ শহর, তারপর আমেরিকার লম্বা জার্নি চোখের সামনে উজ্জ্বল করে তুলে ধরেছেন তিনি। তাঁর আলোচনা ছিলো প্রাণবন্ত।
অধ্যাপক এনামুল কবিরও আলোচনার কলেবর বাড়ান। তিনি বলেন, আমাদের সকলের উৎপত্তি গ্রামে। গ্রামকে ভালোবাসতে হবে। প্রচুর সাহিত্য সৃষ্টি করতে হবে। সাহিত্যের সাথে মানুষের স¤পৃক্ততা আরও বাড়াতে হবে। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, পাগলা বাজার তখনকার সময় ছিলো একটি শহরের মতো। মনে হতো নৌকার হাট বসেছে, অথচ হাট নয় এগুলো ছিলো হাটের দিন বাজারে আসা ক্রেতাদের বাহন। দিন শেষে দশ-বারোজন একসাথে হয়ে নৌকা বেয়ে ডুংরিয়ায় ফিরে যাওয়া ছিলো রীতিমত চ্যালেঞ্জ।
ডা. আফজল তরুকে নিয়ে এই আলোচনায় আরো রসদ যোগান দেন। তিনি বলেন, তরু আমাদের সম্পদে পরিণত হচ্ছে। খুব নীরবে পাগলা বাজার থেকে সাহিত্যকে ধরে রাখতে আন্দোলন শুরু করেছেন তরু স¤পাদক। আমরা এর সারথি হয়ে যেমন আনন্দিত তেমনি গর্বিতও। তরু তলে এসে যেমন মানুষ ছায়া পায়, আশ্রয় পায় তেমনি মফস্বল থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা তরু এই অঞ্চলে সাহিত্যের আলো ছড়াবে এমনই প্রত্যাশা করি। সব সময় তরুর পাশে ছিলাম, আছি ও থাকবো।
চা চক্র ও আলোচনায় আরো অংশ নেন দৈনিক সুনামগঞ্জের সময়ের শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি জামিউল ইসলাম তুরান, দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিনিধি কুহিনূর রহমান নাহিদ, দৈনিক খোলাকাগজের প্রতিনিধি নোহান আরেফিন নেওয়াজ, সাহিত্যপ্রেমী আমিন উদ্দিন, তারেক আহমদ ও শব্দেন নূর আহমদ সাহর। পরে তরু সম্পাদক ইয়াকুব শাহরিয়ারের কৃতজ্ঞতা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে চা চক্রের সমাপ্ত হয়।