ধর্মপাশা প্রতিনিধি :: ধর্মপাশা উপজেলার সরস্বতীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ১১শতক জায়গার মধ্যে পাঁচ শতক জায়গা গত ১৫বছর ধরে উপজেলার সরস্বতীপুর গ্রামের এক ব্যক্তি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। এতে করে ওই বিদ্যালয়টির কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের দৈনিক সমাবেশ ও খেলাধুলার কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সরস্বতীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিদ্যালয়টিতে ২০২৪ সালে ২০৪ জন ছাত্র- ছাত্রী ছিল। এখানে ছয়জন শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও শিক্ষক রয়েছেন মাত্র দুইজন। প্রধান শিক্ষকের পদটি প্রায় ১০বছর ধরে শূন্য রয়েছে। বিদ্যালয়টিতে ওয়াস ব্লক নেই। একটি ৯০ফুটের নলকূপ রয়েছে। এটির পানি আর্সেনিকযুক্ত হলেও নিরুপায় হয়ে এই নলকূপের পানি শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পান করতে হচ্ছে। এই বিদ্যালয়টির ১১শতক রেকর্ডীয় ভূমি রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ শতক ভূমি গত ১৫বছর ধরে সরস্বতীপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিন এটি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। বিদ্যালয়টির ভবনের দক্ষিণপাশে থাকা ৫শতক জায়গায় বেশ কয়েকটি আম ও নারিকেল গাছ লাগানো রয়েছে। বেশকিছু স্থানজুড়ে লাউ গাছের ঝাড় দেখা গেছে। চারদিকে উজারু গাছ দিয়ে জায়গাটিতে বেষ্টনী দেওযা হয়েছে। উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের সরস্বতীপুর গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা মুজাম্মিল হক তালুকদার (৫০) বলেন, গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের গ্রামের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন এই বিদ্যালয়টির ৫ শতক জায়গা অবৈধ দখল করে রেখেছেন। তিনি অবৈধভাবে দখল করা স্থানটিতে বিভিন্ন ফলজ গাছ রোপণ ও সবজির চাষ করেছেন। ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে দ্রুত অবৈধভাবে দখলকরা স্থানটি দখলমুক্ত করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সরস্বতীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষক মো. হাদিস মিয়া বলেন, এই বিদ্যালয়টিতে প্রয়োজনীয় শিক্ষক নেই, বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। রয়েছে আরও নানা সমস্যা। শিক্ষক সংকট থাকায় ছাত্রছাত্রীদের সুষ্ঠুভাবে পাঠদান করা যাচ্ছে না। দীর্ঘবছর ধরে বিদ্যালয়টি ৫শতক জায়গা অবৈধ দখলে রয়েছে। আমি এ নিয়ে অবৈধ দখলদারকে স্থানটি ছেড়ে দিতে বেশ কয়েকবার মৌখিকভাবে বললেও আশানুরূপ কোনো সদুত্তর পাইনি। এতে করে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের দৈনিক সমাবেশ ও খেলাধুলা ব্যাহত হচ্ছে। আমরা বিদ্যালয়টির বারান্দায় কোনোরকমে দৈনিক সমাবেশ কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। মাস খানেক আগে এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) স্যারের কাছে আবেদন করলেও এখনো এ সমস্যার সমাধান হয়নি। সরস্বতীপুর গ্রামের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন (৬৫) বলেন, এই পাঁচ শতক জায়গা আমি অবৈধভাবে দখল করার অভিযোগটি সঠিক নয়। আমার বাবা সরস্বতীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালযে এই পাঁচ শতক জায়গা দান করেছিলেন। বিদ্যালয়ের এই জায়গাটি বহু বছর ধরে পতিত থাকায় এবং আমার বাড়ির সামনে হওয়ায় এটির কিছু স্থান আমরা ব্যবহার করে আসছি। বিদ্যালয়ের প্রয়োজনে এই জায়গাটি ছেড়ে দেব। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানবেন্দ্র দাস বলেন, ওই বিদ্যালয়ের পাঁচ শতক জায়গা অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে দখলে রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আমি অ্যাসিল্যান্ড স্যারের সঙ্গে খুব শিগগিরই এ নিয়ে কথা বলব এবং স্যারকে নিয়ে এ সমস্যা নিরসনে ওই বিদ্যালয়টিতে যাব। ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অলিদুজ্জামান বলেন, উপজেলার সরস্বতীপুর সরকারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির জায়গা কারও অবৈধ দখলে থাকলে তা দখলমুক্ত করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।