স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে সমতাসহ জবাবদিহিতা ও অংশগ্রহণ - এই স্লোগান নিয়ে সুনামগঞ্জে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন ও করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত বৃহঃপতিবার (১৬ জানুয়ারি) বেলা ১১ টায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের মিনি কনফারেন্স হলে। নামোল্লেখ করে বলা হয়েছে সভায় বিভিন্নজন মূল্যবান বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু কী করণে বা কেন সংবাদবিবরণীতে তাঁদের বক্তব্য এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বোধগম্য নয়। তাঁদের বক্তব্য পাওয়া গেলে আমাদের সুনামগঞ্জের স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান হালহকিকত অবগত হওয়া যেতো এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষজন অন্তত জানতে পারতেন তাঁদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে মতবিনিময় সভার কর্তারা কী ভাবছেন। সে যাই হোক। আমরা মনে করি, আমাদের দেশে স্বাস্থ্যসেবাকে ইতোমধ্যে দামি পণ্য করে তোলা হয়েছে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে মানের অবনতি ঘটেছে। রোগীরা প্রায়ই অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছেন, কিংবা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাবঞ্চিতরা বেসরকারি হাসপাতালে ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের স্বল্পতাসহ এখানে চিকিৎসাসুবিধাও পর্যাপ্ত নয়, একবারেই অপ্রতুল। গত ক’দিন আগে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করা অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেনের শোকসভায় উপস্থিত বিশিষ্ট নাগরিক অ্যাটভোকেট রোকেস লেইস তাঁর বক্তব্যে বলেছেন যে, আমাদের সুনামগঞ্জ সরকারি সদর হাসপাতালে হার্ট অ্যাটাকের রোগীকে প্রাথমিকভাবে সাধারণ চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই, সিলেট রেফার করা হয়। সিলেট পৌঁছানোর আগেই মাঝ পথ থেকেই অধিকাংশ রোগী লাশ হয়ে ফেরত আসেন। বলাবাহুল্য অ্যাটভোকেট আনোয়ার হোসেন সিলেট যাওয়ার পথে রাস্তায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অথচ সুনামগঞ্জ একটি জেলা শহর, এই জেলার লোক সংখ্যা ২৮ লক্ষাধিক। বলতেই হয়, আমরা সুনামগঞ্জবাসী স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির দিক থেকে ব্যাপকামাত্রায় বঞ্চিত আছি। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে স্বাস্থ্যসেবা বিশেষ করে গরিব মেহনতি মানুষের জন্য পূর্বাপেক্ষা দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠবে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি ও ভ্যাটবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে কীছু কীছু নিত্যপ্রয়োজনীয় ঔষধের দাম বেড়েছে। জনগণের প্রত্যাশানুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির খরচ পর্যায়ক্রমে ধীরে ধীরে কমিয়ে যেখানে নিখরচায় নিয়ে যাওয়ার কথা সেখানে এইভাবে ঔষধের দাম বৃদ্ধি মানুষকে হতাশ করেছে বৈ কি। বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত এই যে, সমস্ত রকমের অপচয়, সম্পদপাচার ও দুর্নীতির মাধ্যমে জাতীয় সম্পদ লুটপাট বন্ধ করে বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ করায় সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। এবং পরিশেষে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই, হার্ট অ্যাটাকের পরিপূর্ণ চিকিৎসা প্রাপ্তিকে এখানেই নিশ্চিত করার সার্বিক সুযোাগ সৃষ্টি করা হোক, যাতে সিলেট যাওয়ার পথে দুঃখজনক মৃত্যুর মর্মযাতনায় রোগী ও রোগীর স্বজনদের ভোগতে না হয়।