সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
প্রয়োজনীয় সংস্কার সেরে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করে আসছিল বিএনপি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে একাধিকবার নির্বাচনের রোডম্যাপও চেয়েছে দলটি। এবার খোলাখুলিভাবেই নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার এই বক্তব্যের মধ্য দিয়েই নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ভাবনা স্পষ্ট হয়ে যায়। তবে তাদের দাবির সঙ্গে জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মতপার্থক্য রয়েছে। তারা সংস্কার শেষে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার পক্ষে। অন্যদিকে বিএনপির মতোই দ্রুত নির্বাচন চায় তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। ওইসব দলের নেতারা মনে করছেন, অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন থাকলে সরকার ও দেশের জন্য তা ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে চলতি বছরের মাঝামাঝিতেই নির্বাচন করা সম্ভব। নির্বাচিত সরকার এলে দেশের চলমান সংকটও সমাধান হবে বলে মনে করছেন তারা।
গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ স¤পাদক সাইফুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া দরকার। অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে পারে না। সরকার ও দেশের জন্য এটা ঝুঁকিপূর্ণ। সদিচ্ছা থাকলে আগামী ৫-৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে কমিশন নির্বাচনের জন্য শতভাগ তৈরি হয়ে যেতে পারবে। এখন বাকিটা নির্ভর করছে সরকারের ওপর। তারা চাইলে জুলাই-আগস্টে নির্বাচন করা অসম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, এই সরকার সব সংস্কার করতে পারবে না। তাদের সেই ম্যান্ডেট নেই। সংবিধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তারা কনসাস তৈরি করতে পারে, পরবর্তীতে নির্বাচিত সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে। গণহত্যার বিচার হবে, এটা সবার দাবি। এই সরকার বিচার শুরু করবে, পরের সরকার শেষ করবে। এটা নিয়ে অযথা জটিলতার কারণ নেই।
তবে বিএনপির দাবির সঙ্গে কিছুটা ভিন্নমত রয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক নাগরিক ঐক্যের। দ্রুত নির্বাচনের চেয়ে ভালো নির্বাচনের দাবি তাদের। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, জুলাই-আগস্টের কথা বিএনপি বলেছে। আমাদের কথা হচ্ছে, নয়ছয় মার্কা ভোটের দরকার নাই। একটা ভালো নির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব তা করা। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, দেড় বছরের মধ্যে ভোট করতে পারবেন। এ সময়ে করতে পারলে করুক। যদি এক বছরের মধ্যে করতে পারে তাও ভালো। ভোটটা যাতে ভালো হয়, এটা আমরা চাই।
১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, চলতি বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করে আসছে ১২-দলীয় জোট। বিএনপি মহাসচিব জুলাই-আগস্টে নির্বাচনের দাবি করেছেন। এটা আমাদের দাবির কাছাকাছি। আমরা সরকারকে বলে আসছি জুনের মধ্যে নির্বাচন দিতে পারবেন এবং দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেখতে হবে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল কী চায়। দুই-একটা দলের দেরিতে নির্বাচন চাওয়ার কারণ জানি না। তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা সন্দিহান। নাগরিক কমিটি দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছিল। তারা এখনও তা দিতে পারেনি। তারা চাইবে নির্বাচন দেরিতে হোক, যাতে তারা গুছিয়ে নিতে পারে।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, এটা অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারকে মানুষ অনির্দিষ্টকালের জন্য থাকতে দেয়নি। আমরা চাই চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। জুলাই-আগস্টের মধ্যে হলে আরও ভালো। দীর্ঘ ১৬ বছর শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। এ সময়ে তিনটি সংসদ নির্বাচন হয়েছে। মানুষ ভোট দিতে পারেনি। সরকারের কাজ হবে অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া। এটা না করলে মানুষ মনে করবে, ওয়ান-ইলেভেন সরকারের মতো এই সরকারও ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চায়।
এর আগে আগামী জুলাই নাগাদ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব। গত মঙ্গলবার চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত করা হলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ক্রমশ বাড়বে। যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে, সেহেতু জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার কারণ নেই। ২০২৫ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, নির্বাচন কমিশন ও সকল রাজনৈতিক দলকে ঐকমত্যে আসার আহ্বান জানান তিনি।