মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী ::
অভাব অনটনের সঙ্গে লড়াই করে বেড়ে ওঠেছেন হাওড়পাড়ের বিউটি আক্তার। অসচ্ছল পরিবারে জন্ম নেওয়া ওই নারী অর্থনৈতিক পিছুটান ছাড়েনি স্বামীর সংসারেও। বিয়ের পর থেকেই সংসার ধরে রাখতে দিনমজুর স্বামীর পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তিনি দুই সন্তানের জননী। তবুও থেমে নেই তাঁর নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রকট উদ্যম। তিনি দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের মামুনপুর গ্রামের দিনমজুর রহমত আলীর স্ত্রী।
বিউটি আক্তার গত কয়েক বছর ধরে সংসারে স্বস্তি ফেরাতে সবজি চাষাবাদ করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করে আসছেন। প্রতি বছর শীতকাল আসলেই তিনি নিজেকে স্বাবলম্বী করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং অন্যের পতিত জমি লিজ নিয়ে চাষ করেন বিষমুক্ত সবজি। এতেই চলে তাঁর সংসার। চলতি শীত মৌসুমেও অন্যের চল্লিশ শতক জমি লিজ নিয়ে তিনি বিষমুক্ত টমেটো চাষ করে রীতিমতো চমক সৃষ্টি করেছেন। এলাকাজুড়ে এখন তাঁর টমেটো ক্ষেতের বা¤পার ফলনের কথা ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, এবার দেশীয় টমেটোর বা¤পার ফলন হয়েছে বিউটি আক্তারের ক্ষেতে। পড়ন্ত বিকেলে তিনি ফলন্ত টমেটো গাছের পরিচর্যা করছেন। প্রতিটি গাছেই ঝুলে আছে থোকা থোকা টমেটো। কুয়াশাভেজা রোদে আধপাকা ও কাঁচা টমেটোর অনন্য দৃশ্য যেন মন জুড়ায় তাঁর সবজি ক্ষেতে।
এভাবেই শীতকালীন সবজি চাষ করে হাওড়পাড়ের নারীরা স্বামীর পাশাপাশি সংসারে অর্থনৈতিকভাবে অবদান রাখছেন। ফলে এসব পরিবারে নতুন আশার আলো দেখা যাচ্ছে। একইভাবে সবজি চাষ করে বিউটি আক্তারের মতো অস্বচ্ছল পরিবারের নারীরাও নতুন অর্থনৈতিক ভূমিকা গ্রহণ করে পরিবারের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও জীবনমান উন্নয়নে অংশীদার হয়ে উঠতে পারেন বলে মনে করেন সমাজ সচেতনরা।
হাওড়পাড়ের কৃষাণী বিউটি আক্তার বলেছেন, লিজ নিয়ে চল্লিশ শতক জমিতে দেশীয় টমেটো চাষ করে খুব আশাবাদী আমি। এবছর টমেটো ও কাঁচামরিচ চাষ করেছি। আমার খেতে সবেমাত্র টমেটো পাকতে শুরু করছে, এখনো বিক্রি শুরু হয়নি। বর্তমান বাজারে দেশীয় টমেটো প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে এবার লাখ টাকার টমেটো বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় কৃষি অফিসের কোনো পরামর্শ বা সহযোগিতা পাইনি। সহযোগিতা ও সহজ শর্তে ঋণ পেলে শীতকালীন সবজি চাষ করেই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।
উপজেলা কৃষি অফিসার শেখ মোহাম্মদ মহসিন বলেছেন, এ বছর দোয়ারাবাজার উপজেলায় ১৩শ’ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষাবাদ হয়েছে। এছাড়া হাওরপাড়ে শীতকালীন সবজি চাষ করে অনেক নারীরাই এখন স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এমন কারো সন্ধান পেলে আমরা সার্বিক পরামর্শ এবং তাদের ট্রেনিংসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকি।