“৭২’র সংবিধান বাতিল করা যাবে না, ৩৬ বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতিবাদ” এবংবিধ সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে। খুব ভালো কথা। সংবিধান থাক। আমরা তাঁদেরকে সমর্থন করছি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে আমরা যদি সংবিধান না মানি তবে সংবিধান রেখে কী লাভ? সংবিধান না মেনে দেশ পরিচালিত হয়েছে বিগত ৫৩ বছর ধরে এবং তার জের হিসেবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটেছে। সংবিধানের প্রস্তাবনায় মূল চারনীতির দুইটি সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র, অথচ বিগত ৫৩ বছরের মধ্যে এই শব্দ দুটিকে সংবিধানের পাতায় বন্দি করে রাখা হয়েছে বটে কিন্তু রাষ্ট্রপরিচালনার মাঠপর্যায়ে কার্যকর করা হয়নি। সমাজতন্ত্র তো দিল্লি দূরস্থ এমনকি গণতন্ত্রের ছিঁটেফুটাও জনগণের জন্য বরাদ্দ করা হয়নি, যা করা হয়েছে ত হলো সাধারণ মানুষকে শোষণ করে আখের ছোবড়া বানানো এবং বিভিন্ন আইন প্রয়োগ করে বাকস্বাধীনতা হরণ করে রাষ্ট্রকে পীড়নযন্ত্রে পরিণত করা। এতো দিন রাষ্ট্র পরিচালনা করা হয়েছে দেশের বাইরে সম্পদ পাচার করতে, উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের খেত বানাতে। আগামী দিনে এভাবে সংবিধানের ধার না ধেরে রাষ্ট্র পরিচালিত হলে আবারও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মতো কিংবা তার চেয়ে আরও বড় ধরনের আন্দোলনে নামতে হবে দেশবাসীকে। ভুলে গেলে চলবে না, নয়া ঔপনিবেশিকতার নীতি মুক্তবাজার অর্থনীতির খপ্পর থেকে দেশকে মুক্ত করে সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের চর্চা না করতে পারলে বিদেশনির্ভরতা কমবে না এবং বিদেশনির্ভরতা রাষ্ট্রকে সব সময় দুর্বল করে রাখবে। সুতরাং সর্বাগ্রে সংবিধান রক্ষা করুন এবং মনে রাখুন, সংবিধান রক্ষা করে সংবিধানের চারনীতির প্রধান দুই নীতি সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের চর্চায় ব্রতী না হলে সংবিধান রক্ষার চেয়ে সংবিধান বাতিল করাই উত্তম।