শহীদনূর আহমেদ :: নির্ধারিত সময়ের এক মাস পার হয়ে গেলেও এখনো শুরু হয়নি জেলার বিভিন্ন হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ। যেসকল বাঁধে কাজ শুরু হয়েছে সেগুলোতে অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় ঢিমেতালে কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) লোকজন। ফলে বেঁধে দেয়া সময় ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের কবল থেকে বোরো ফসলের সুরক্ষা দিতে সরকার প্রতিবছর ফসল রক্ষা বাঁধে বরাদ্দ দিয়ে থাকলেও সময় মতো কাজ শুরু ও শেষ না হওয়ায় ফসল নিয়ে চিন্তিত থাকেন সংশ্লিষ্ট হাওরে কৃষকরা। প্রতি বছরের মতো এবারও বাঁধ নির্মাণকাজের শুরু থেকেই গলদ পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। সংশ্লিষ্ট হাওরপাড়ের কৃষক ও হাওর কৃষকের সংগঠন জানিয়েছে, নির্ধারিত ১৫ ডিসেম্বর একযোগে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের এক মাস পার হয়ে গেলেও এখনো অনেক হাওরে বাঁধের কাজ শুরু করতে পারেনি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি। দেরিতে পিআইসি গঠন, প্রকল্প অনুমোদনে সময়ক্ষেপণ, পিআইসির অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ না দেয়াসহ হাওরের পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে সময় মতো কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। হাওর বাঁচাও আন্দোলন, সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক জানান, জেলাব্যাপী বিভিন্ন হাওরের বাঁধ নির্মাণকাজের তথ্য সংগ্রহ করছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন। সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী জেলার তাহিরপুর, ধর্মাপাশা, মধ্যনগর, জামালগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলাসহ বেশিরভাগ হাওরে বাঁধের কাজ শুরু হয়নি। যেসব হাওরে কাজ শুরু হয়েছে সেখানে কাজে গতি অনেকটাই মন্থর। নীতিমালা অনুযায়ী বাঁধের কাজ শুরুর আগে প্রকল্পের অনুকূলে ২৫% অর্থ ছাড় দেয়ার কথা থাকলেও এখনো পিআইসিরা তা বুঝে পাননি। ফলে অনেকেই কাজ শুরু করতে পারেননি। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এবার সুনামগঞ্জের ৫৩টি হাওরে ৫৮৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। দীর্ঘ পরিমাণ বাঁধ নির্মাণে ৬৭৫টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক ধাপে ৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরমধ্যে প্রথম বিল হিসেবে ২৮ কোটি টাকা ছাড় হলেও দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে টাকা পাননি পিআইসিরা। তবে সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের একাউন্টে টাকা পৌঁছে গেছে এবং দুয়েক দিনের মধ্যে টাকা পিআইসিদের হাতে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার। এদিকে অর্থ ছাড়ের গড়িমসিতে অনেক উপজেলায় কাজ শুরু করা যাচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন পিআইসিরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক একাধিক পিআইসির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জানান, বাঁধ নির্মাণকাজ বাস্তবায়নে থাকা অধিকাংশ কৃষক আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। কাজ করতে এস্কেভেটর, ড্রামট্রাকসহ যে সরঞ্জাম প্রয়োজন তাঁর জন্য অগ্রিম টাকা দিতে হয় পিআইসিদের। প্রথম বরাদ্দ পেলে এক্ষেত্রে সহায়ক হয়। ১ মাস পার হয়ে গেলেও এখনো প্রাথমিক বিল না পাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তারা। এদিকে অনতিবিলম্বে পিআইসিদের অনুকূলে অর্থ ছাড়ের তাগাদা জানিয়েছে কৃষক ও হাওরের সংগঠন হাওর বাঁচাও আন্দোলন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, আমরা এবারও দেখছি বাঁধ নির্মাণকাজে গড়িমসি করা হচ্ছে। এখনো অনেক বাঁধে কাজ শুরু করা হয়নি। এক মাস পার হয়ে গেলেও পিআইসিদের টাকা প্রদান করা হয়নি। এতে সময় মতো কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ইতোমধ্যে টাকা নির্বাহী কর্মকর্তাদের একাউন্টে চলেগেছে। দুয়েক দিনের মধ্যে পিআইসিদের কাজে টাকা বিতরণ করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু সিস্টেম জটিলতার কারণে টাকা পেতে একটু বিলম্ব হয়েছে।