তানভীর আহমেদ ::
সুরমা নদীর তীর ঘেঁষে তৈরি করা সুরমা ভ্যালি ডিসি পার্কের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই ভিড় করেছেন দর্শনার্থীরা। এক সময় যে পার্কটি বখাটে এবং কপোত-কপোতীদের অভয়ারণ্য ছিল সে পার্কটির প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে এর দৃষ্টিনন্দন রূপ দিয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন। এ জন্য নাগরিকরা সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
শুক্রবার বিকেলে সুনামগঞ্জ শহরতলির হালুয়ারঘাট এলাকায় অবস্থিত ডিসি পার্কে গিয়ে দেখা যায়, দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্রবারে দর্শনার্থীদের আনাগোনা বেশি থাকে বলে জানান পার্কের দায়িত্বশীলরা।
পার্কে নানা নকশায় ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ম্যাগনোলিয়া, শিউলি, হাসনাহেনা, কামিনী, বেলিসহ বিভিন্ন ফুল গাছ লাগানো হয়েছে। আর এসব ফুলের সুবাসে ম-ম করছে পার্কের চারপাশ। অবসর সময়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে পার্কের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পেরে খুশি দর্শনার্থীরা।
সুরমা ভ্যালি ডিসি পার্কের ভেতরে রয়েছে ২টি গোলঘর, ১টি নাগরদোলা, ২টি চরকি, ৬টি দোলনা, দর্শনার্থীদের বসার জন্য বেঞ্চ, বাচ্চাদের ১টি জাম্পিং, ফটো সেশন ফ্রেইম, ৫টি বসার ছনের ঘর, শিশুদের সাঁতার শিখানোর জন্য রয়েছে স্বচ্ছ পানির একটি মিনি সুইমিংপুল (চৌবাচ্চা) সহ পার্কের বাইরে করা হচ্ছে দর্শনার্থীদের যানবাহন পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা।
জানাযায়, সাপ্তাহিক ছুটির দিনের অবসর সময়ে নদীর তীরবর্তী নির্মল পরিবেশে অবসর সময় কাটানোর জন্য বন্ধু-বান্ধব কিংবা সপরিবারে প্রকৃতিপ্রেমীরা ঘুরতে যান সেখানে। সুরমা ভ্যালি ডিসি পার্ককে কেন্দ্র করে আশপাশের এলাকায় দিন-দিন লোক সমাগমও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা। পার্কের আশপাশে অস্থায়ী দোকান পেতে বসছেন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা। ফলে অনেকেরই কর্মসংস্থান হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পার্কের ভেতরে ও বাইরের এলাকায় সার্বক্ষণিক দায়িত্বশীল লোকজন অবস্থান করছেন। একই সাথে পার্কের ভেতরে ও আশপাশ এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে সি.সি ক্যামেরা। এসব নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং নানা খাতে ব্যয়ের কারণে পার্কে প্রবেশ ফি চালু করা হয়েছে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় এই পার্ক নতুনভাবে উন্নয়ন ও সংস্কারকাজের উদ্বোধন হয়। সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে পার্কের উন্নয়ন ও সংস্কারকাজের দায়িত্ব নেন বর্তমান জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। সুরমা ভ্যালি ডিসি পার্কের সকল উন্নয়নকাজ সম্পন্ন করে অনেক আগেই দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
দর্শনার্থীরা বলছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি সুরমা ভ্যালি ডিসি পার্ক দর্শনার্থীদের সঠিক সেবা দিতে পারলে অতি অল্প সময়ে সুপরিচিতি লাভ করবে। বাইরের দর্শনার্থীদের নিরাপদ সময় কাটানোর স্থান হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পাশাপাশি দর্শনার্থীদের নিরাপদে সময় কাটানোর একটি ভালো জায়গা তৈরি হবে।
পরিবার নিয়ে পার্কে বেড়াতে আসা আশরাফুল আলম বলেন, জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগে আমরা স্বাগত জানাই। যথাযথ সংস্কার করে পার্কটি চালু হওয়ায় আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে অবসর সময় কাটাতে নতুন একটি জায়গা পেয়েছি। তিনি বলেন, আগেও একদিন এই পার্কে এসেছিলাম। তবে তখন আর এখন অনেক পার্থক্য। পুরো পার্কটা অসাধারণ লাগছে। পার্কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় এখন পরিবার নিয়ে আসলেও সমস্যা নেই।
সুরমা ভ্যালি পার্কে ঘুরতে আসা মাজহারুল ইসলাম বলেন, শুধু শুক্রবারে নয় যদি ডিসি পার্কের প্রচার-প্রচারণা ব্যাপকভাবে করা হয় তাহলে প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের সমাগম হবে। পার্কের পাশে লাগানো ফুলের গাছগুলো দেখতে অত্যন্ত চমৎকার। ফুলের গন্ধ মানুষকে আকৃষ্ট করছে। প্রথমবার পার্কে এসে ভালই লাগছে, পরবর্তীতে পরিবার-পরিজন নিয়ে পার্কে আসার প্ল্যান রয়েছে। পাশাপাশি তিনি সবসময় পার্কের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, সুরমা ভ্যালি ডিসি পার্ককে একটি সবুজ পার্কে রূপান্তর করা হবে। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও ফুলের গাছে ভরে দেয়া হবে পুরো পার্ক এলাকা। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ স্থান হবে এই পার্ক। শিশুরা খেলাধুলা করতে পারবে, পাশাপাশি সাঁতার শেখারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, পুরো পার্ক ও আশপাশ এলাকা সি.সি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। আর এই পার্ককে জেলার একমাত্র বৃহৎ পার্কে রূপান্তর করার কথাও জানান জেলা প্রশাসক।