সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে প্রতি বছর ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির মচ্ছব চলে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিরোধের যথাসাধ্য চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু বিধি বাম, কখনওই পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। এবারও ‘বাঁধের কাজে কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না’ বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এটি একটি প্রশাসনিক ঘোষণা, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রতিবেদেনের শিরোনাম হয়ে জনসমক্ষে প্রস্ফোটিত হয়েছে। কোনও কোনও অনিয়মের বিরুদ্ধে এমন ঘোষণা উপর মহলের যাঁরা দেশ নিয়ন্ত্রণ করেন তাঁদের পরাক্রান্ত কারও কারও পক্ষ থেকে শোনার সৌভাগ্য দেশেবাসীর হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি ব্যর্থতার কথা ঘোষণা করে দেশের ভেতরে সরকারের চেয়ে অনিয়ম করনেওয়ালা সিন্ডিকেট শক্তিশালী হয়ে পড়ার সত্যকে স্বীকার করে নিয়েছেন। গণমাধ্যমে এবংবিধ বার্তা সম্প্রচারিত হয়েছে। আসলে বর্তমানে দেশের অবস্থাটা এমন হয়ে পড়েছে যে, সর্বত্র অনিয়মের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে অনিয়মকেই নিয়ম করে তোলেছে। একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা যখন ‘বাঁধের কাজে কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না’ বলে ঘোষণা করেন এবং সে-ঘোষণা গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়ে উঠে তখন তার পাশাপাশি অন্য সংবাদের শিরোনাম করা হয়, ‘দিরাই রাস্তার যাত্রী ছাউনি ব্যবসায়ী ও বখাটেদের দখলে’, ‘তিন যুগ ধরে বন্ধ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সেবাবঞ্চিত ৫০ গ্রামের মানুষ’ কিংবা ‘টাঙ্গুয়ার হাওরে দেড় লক্ষ টাকার অবৈধ জাল জব্দ’। এতে দেশের ভেতরে সর্বত্র অনিয়মের শিকড় যে অনেক গভীরে প্রবিষ্ট, তা অনুমান করতে বুদ্ধি খরচ করতে হয় না এবং এইরূপ অনিয়ম বন্ধ করার ঘোষণাকে প্রকৃতপ্রস্তাবে কার্যে পরিণত করা যে, বলতে গেলে, প্রায় অসম্ভব সেটা প্রতিপন্ন হয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যে বিদ্যমান আর্থসামাজিক ব্যবস্থা কাঠামোকে জনসমাজের কল্যাণমুখি করা দরকার, তা-না হলে না বৈষম্যের অনিয়ম কীছুতেই কমবে না এবং সম্পদ আত্মসাতের হরেক রকম অনিয়ম চলতেই থাকবে। জনজটের হাপাতালের দেয়ালেও লিখে রাখতে হবে, ‘পকেটমার হতে সাবধান’। তাই চাই মুনাফামুখি মুক্তবাজার অর্থনীতির পরিবর্তে সম্পদ বণ্টনের সাম্যবাদী নীতির প্রবর্তন। পরিশেষে বলি, ধনবৈষম্যের অনিয়ম দূর করুন, হাওরের বাঁধে অনিয়ম দূর হবে।