শহীদনূর আহমেদ ::
আমনের ভরা মৌসুমের মধ্যেও সুনামগঞ্জের বাজারে বেড়েছে চালের দাম। গত দশ দিনের ব্যবধানে এই সপ্তাহে খুচরা পর্যায়ে চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সবজির সরবরাহ বাড়ায় কাঁচাবাজারে স্বস্তি দেখা দিলেও অতি দরকারি খাদ্যপণ্য চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এতে বিপাকে পড়েছেন নি¤œআয়ের মানুষজন।
এদিকে, আমনের বা¤পার ফলনেও প্রভাব পড়েনি বাজারে। ধান উৎপাদনের ভরা মৌসুমে দাম কমার বদলে উল্টো বেড়ে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। তাদের অভিযোগ, নজরদারির ঘাটতিতে অসাধু সিন্ডিকেট বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। এতে বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতিমুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণেই চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। অপরদিকে, খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, চালের সরবরাহ কম থাকায় দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শনিবার সুনামগঞ্জ শহরের বিভিন্ন দোকানে গিয়ে জানা গেছে, গত দেড় থেকে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে সরু, মোটা, সিদ্ধ সকল প্রকার চালের দাম কেজিতে প্রকার ভেদে ২ থেকে ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। নন-ব্র্যান্ডের মিনিকেট বা জিরাশাইল চাল ৭৮ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে যা ৭৪ থেকে ৭৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। কাটারীভোগ সিদ্ধ ৮০ টাকা, ২৮ সিদ্ধ ৬৫ টাকা, নাজিরশাল ৬৮ টাকা, মাঝারি মানের ব্রি-২৮ এখন কেজি ৬৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যা এক সপ্তাহ আগেও প্রকার ভেদে কেজি প্রতি ২ থেকে ৫ টাকা কম ছিল। কোনো প্রচারেই চালের দাম স্থিতিশীল থাকছেনা বলে জানান ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা।
পৌর শহরের বড়পাড়ার বাসিন্দা রাজমিস্ত্রী মিনার হোসেন বলেন, আমন মৌসুমেও চালের কমছে না। আমাদের মতো দিনমজুর পরিবারের ভোগান্তির শেষ নেই। এভাবে আর কয়দিন চলা যায়।
রিকসা চালক সালাম মিয়া বলেন, সব কিছুর দাম বাড়তি। চালের দাম প্রতিদিনই বাড়ে। যা উপার্জন করি তা কয়েক কেজি চাল কিনলেই শেষ। বাজারে নতুন চাল আসছে, তারপরও চালের দাম কমছে না। নতুন চাল বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
এদিকে চালের মূল্যবৃদ্ধির জন্য খুচরা বিক্রেতা, পাইকারি ব্যবসায়ী এবং মিল-মালিকরা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। তাদের দাবি, ধানের দাম বাড়তি ও সরবরাহ দেখিয়ে মিলমালিকরা দাম বাড়াচ্ছেন।
শহরের পুরাতন জেলরোডের সুধাংশু এন্ড সন্সের লিপু পাল বলেন, বাজারে চালের সরবরাহ কম। মিল মালিকদের টাকা দিয়েও পুরাতন চাল পাচ্ছি না। চালের দাম বৃদ্ধিতে আমাদের কোনো লাভ নেই। মিলার থেকে আমরা যে দাম পাই সেই দামেই বিক্রি করি।
মেসার্স মজিদ অটো চায়না রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী নাসির উদ্দিন তালুকদার বলেন, সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ চলছে। তাই বাজারে ধানের সরবরাহ কম। এর ফলে চালের দাম বাড়তির দিকে।
সুনামগঞ্জ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, চালের বাজারে দামের অস্থিরতা বিরাজ করছে। এটি সব জায়গাতে হচ্ছে। আমরা সব সময় বাজার মনিটরিং করছি। কোনো কারণ ছাড়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির এমন অভিযোগ পেলে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।