সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, যারা উপদেষ্টা আছেন তাদের সম্পর্কে আমি জানি, তারা অত্যন্ত যোগ্যতা স¤পন্ন মানুষ। আমি বিশ্বাস করি তারা দেশের স্বার্থেই কাজ করছেন। মনে হচ্ছে একটি অদৃশ্য শক্তি আছে, যারা উপদেষ্টাদের কাজে হস্তক্ষেপ করছে। দেশের অর্ধেক মানুষের বিরুদ্ধে বাকি অর্ধেক মানুষকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশ ও বিচার বিভাগ যেন বাধ্য হয়ে তাদের সহায়তা করছে।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ের মিলনায়তনে জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের বিদেহী আত্মার প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন গোলাম মোহাম্মদ কাদের। একই সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম জানিয়েছেন। ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ছাত্র-জনতার প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা জানান তিনি।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ বৈষম্য মুক্তির যুদ্ধ নামে পরিচিত। বাঙালির ইতিহাসে অনেকবার মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বৈষম্যহীন স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি দেশ চেয়েছিলাম আমরা। এটা বাঙালির ইতিহাসে সর্বোচ্চ গৌরবোজ্জ্বল অর্জন। মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে আমরা আবার বৈষম্যের শিকার হয়েছি। এ বছর জুলাই-আগস্ট মাসে আমাদের সন্তানরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করে বিজয়ী হয়েছে। তাদের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ সালাম। যারা আহত হয়েছে তাদের দ্রুত পুনর্বাসনের দাবি জানাচ্ছি। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের জন্য সরকার কোর্টের মাধ্যমে ও বাঁকা পথে নানাভাবে চেষ্টা করছিল। তখন জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্ররা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিল। ছাত্ররা প্রতিবাদ করেছিল, তাদের চাকরি যেন হয় মেধার ভিত্তিতে। আমরা এসময় সংসদে ও সংসদের বাইরে বলেছি, ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী এই আন্দোলন অত্যন্ত যৌক্তিক।
জিএম কাদের উল্লেখ করেন, বিচারের নামে কোনও প্রহসন চাই না। আজকে আপনি ক্ষমতায় আছেন, একটি হত্যা মামলা ধামাচাপা দিতে পারেন। ১০/১৫ বছর পর যখন আপনি ক্ষমতায় থাকবেন না তখন আবার ঠিকই সেই মামলা সামনে চলে আসবে। এই সময় যারা হত্যা মামলার কথা বলছেন, এই সময়ের আগের এবং পরের সকল হত্যা মামলার সঠিক বিচার হবে। তাই, তাড়াহুড়া করার কোনও দরকার নাই।
তিনি অভিযোগ করেন, শহীদদের আত্মত্যাগকে মিথ্যা মামলা বানিয়ে লাখ লাখ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। শহীদদের হত্যা মামলা নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে, ব্যক্তিগত শত্রুতা উদ্ধারে ও সামাজিক ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য প্রতিশোধ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
কাদের বলেন, সারাদেশকে দু’ভাগে বিভক্ত করা হচ্ছে। একটি অংশকে বলা হচ্ছে দেশপ্রেমিক, আরেকটি অংশকে বলা হচ্ছে দেশদ্রোহী। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যারা নির্যাতিত হয়েছে বা ঝুঁকিতে ছিল তাদেরকে দেশপ্রেমিক মনে করা হচ্ছে। যারা নির্যাতিত হয়নি তারা দেশপ্রেমিক নয়? যারা পুরস্কৃত হয়েছে তারা দেশদ্রোহী? এইসব দেশপ্রেমিকদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে মিথ্যা মামলা করা, গালাগাল করা, বাড়িঘরে আক্রমণ করা এবং লুটতরাজ করার জন্য?
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, দেশকে শুধু দুই ভাগ করা হয়নি, এক ভাগকে অন্য ভাগের উপর লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। এমন বাস্তবতায় কখনোই দেশে স্থিতিশীলতা আসতে পারে না। যেকোনও সময়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা সরকারকে সহায়তা করতে চেয়েছি। শুনলাম তারা আর সংস্কার করতে পারছে না, তারা একটি সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করছে। কারণ, সংস্কার করতে হলে সংসদে যেতে হবে। সবদলের সহযোগিতা ছাড়া সংস্কার সংসদে পাস করা যাবে না। এখন নির্বাচন নিয়ে কথা হচ্ছে, প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পাবো- এটা আমরা মনে করতে পারছি না। আমার তৃণমূল নেতাকর্মীদের নামে এখনও মামলা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দু’জন এখনও জেলে আছে। মাঠেঘাটে সভা-সমাবেশ করতে গেলে বাধা দেওয়া হচ্ছে।