সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
গাজীপুরে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ ও জুবায়ের পন্থীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের তিন মুসল্লি নিহত এবং বেশ কয়েক মুসল্লি আহত হয়েছেন। বুধবার ভোরে ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের ছাউনিতে এ ঘটনা ঘটে। মাওলানা সাদ ও জুবায়ের পন্থী দুই মিডিয়া সমন্বয়কারী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান নিহত তিনজনের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন- জুবায়ের পন্থী সাথী মো. আমিনুল ইসলাম বাচ্চু তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া এলাকায়। নিহত অপরজন সাদপন্থী সাথী তাইজুল ইসলাম। তার বাড়ি বগুড়া জেলায় এবং তৃতীয়জন হলেন বেলাল (৬০)।
জানা গেছে, বিশ্ব ইজতেমার আগে আগামী ২০ ডিসেম্বর থেকে ৫ দিনের জোড় ইজতেমা করার জন্য সাদ অনুসারী মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে প্রবেশের চেষ্টা করছিল। আর সাদপন্থীরা যেন ইজমেতা ময়দানে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আগে থেকেই ইজতেমা ময়দানে অবস্থান করছিল জুবায়ের পন্থীরা মুসল্লিরা। আর ইজতেমা ময়দানের পশ্চিমে নদীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থান করছিল সাদ অনুসারী মুসল্লিরা। বুধবার রাত তিনটার পর মাওলানা সাদ অনুসারীরা শতশত মুসল্লি কামারপাড়া ব্রিজ পার হয়ে ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের গেট দিয়ে ময়দানে প্রবেশ করে। এসময় ইজতেমা ময়দানের ফটকে পাহারায় থাকা জুবায়ের অনুসারীরা তাদের মারধর করে ফটক খুলে ময়দানে প্রবেশ করে সাদপন্থী মুসল্লিরা। এ সময় ময়দানের বিভিন্ন স্থানে ঘুমিয়ে থাকা জুবায়েরপন্থী মুসল্লিদের হামলা চালায় মাওলানা সাদ অনুসারী মুসল্লিরা। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের বেশ কিছু মুসল্লি আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লা মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
তাবলীগ জামাত বাংলাদেশ (শুরায়ী নেজাম) মাওলানা জুবায়ের অনুসারী মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, বুধবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বেলা ১২টায় তাদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং করার কথা এবং সুন্দর একটি সিদ্ধান্ত জানানোর পরিকল্পনা করেছিলেন এবং হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিসসহ কয়েকজন সমন্বয়ক রাতে আড়াইটায় কাকারাইল মসজিদে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন কিভাবে সমস্যা সমাধান করা যায়। একটু পরেই খবর আসে সাদপন্থীরা আশেপাশ থেকে বিভিন্ন সন্ত্রাসী ভাড়া করে এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের নতুন, পুরাতন সমস্ত সাথী জমা করে টঙ্গী ময়দানের ফরেনটেন্ট ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে। সাদপন্থীরা যখন কোনোভাবেই প্রশাসনিক কোনো সিদ্ধান্ত পাচ্ছে না দেখে তখন মাঠে ইজতেমার কাজে নিয়োজিত ঘুমন্ত তাবলীগের সাথীদের উপর রাত ৪টার দিকে হামলা চালায়। এতে প্রচুর সাথী আহত হন এবং ঘটনাস্থলেই মো. আমিনুল ইসলাম বাচ্চু নামে আমাদের একজন সাথী নিহত হন। বর্তমানে প্রচুর পরিমাণ দাওয়াত ও তাবলীগের সাথী ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে এবং ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কিছুক্ষণ পূর্বে আরও একজন মারা যান।
এদিকে বিশ্ব ইজতেমার মাওলানা সাদ অনুসারী মিডিয়া সমন্বয়কারী মো. সায়েম বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের সাথীরা ইজতেমা ময়দানে প্রবেশের চেষ্টাকালে তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে তাইজুল ইসলাম নামে এক সাথী নিহত হন।
অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন জায়গায় আমাদের সাথীদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। জেলায় জেলায় প্রশাসনের লোক তাদের সাথীদের বহনকারী গাড়ি আটকে দিচ্ছে ও ফেরত পাঠাচ্ছে।
এ ব্যাপারে টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান জানান, ইজতেমা ময়দানে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনার খবর পেয়েছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।