শহীদনূর আহমেদ ::
বোরো ফসলের সুরক্ষায় এবার জেলার ৫৩টি হাওরে ৫৮৮ কিলোমিটার ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করবে সরকার। এতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যে বাঁধ নির্মাণকাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এদিকে নির্ধারিত ১৫ ডিসেম্বর জেলাব্যাপী বাঁধ নির্মাণকাজের ‘লোকদেখানো’ উদ্বোধনের অভিযোগ উঠেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিরুদ্ধে। ফলে বিগত সরকারের মতো এবারও বাঁধের কাজের অনিয়ম-দুর্নীতির শঙ্কায় রয়েছেন হাওরে কৃষকরা। এদিকে নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ শুরু না হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে হাওর ও কৃষকের সংগঠন ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’।
জানাযায়, ১৫ ডিসেম্বর রবিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাংলার হাওরের ১নং প্রকল্পে বাঁধের উপরে কয়েক টুকরি মাটি ফেলে বাঁধ নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। উদ্বোধনকালে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রেজাউল করিম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অতীশ দর্শী চাকমা, সদর উপজেলা পাউবো’র শাখা কর্মকর্তা আতিকুর রহমান, রঙ্গারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাইসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে থাকা অন্যান্য লোকজন। এসময় দেখা যায়, বাঁধের গোড়া থেকে কয়েক টুকরি মাটি এনে বাঁধের উপরে রাখেন কয়েকজন শ্রমিক। অতিথিবৃন্দ বাঁধের রাখা মাটিতে কোদাল রেখে ফটোসেশন করেন। পাউবো ও জেলা প্রশাসনে কর্মকর্তারা চলে আসার সাথে সাথে পিআইসির লোকজন বাঁধের সাইনবোর্ডসহ মাটি কাটার সরঞ্জাম নিয়ে বাড়ি চলে যান।
উদ্বোধনের পর কাজ না করে বাঁধ থেকে সরে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে ১নং পিআইসির সভাপতি হাবিব উল্লাহ বলেন, আমাদের আগে থেকে জানানো হয়নি। জানালে আগেই মেশিন রেডি করে রাখতাম। এসও স্যার কাজ উদ্বোধনের কথা বলায় কয়েকজন শ্রমিক এনে বাঁধে মাটি ফেলা হয়েছে। তবে মাটি কাটার মেশিন রাস্তায় রয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যে কাজ শুরু করা যাবে।
এদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানাযায়, বেশিরভাগ উপজেলায় লোকদেখানো উদ্বোধনের মাধ্যমে বাঁধের কাজ শুরুর ‘আইওয়াস’ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন উদ্বোধনে উদ্বেগ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট হাওরের কৃষক ও সচেতন নাগরিকরা।
শাল্লা উপজেলার বাসিন্দা আনিসুল হক মুন জানান, শাল্লা উপজেলায় নিয়ম রক্ষার জন্যে একটা বাঁধে মাটি ফেলা হয়েছে। যা প্রতি বছর হয়ে থাকে। ১৫ ডিসেম্বর নিউজ করার জন্য এমন ফটোসেশন হয়েছে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলন বলেন, আমরা জেলাব্যাপী খবর নিয়েছি। ১৫ ডিসেম্বর বাঁধের কাজ উদ্বোধনের নামে তামাাশা হয়েছে। বাঁধে কয়েক টুকরি মাটি ফেলে নিয়ম রক্ষা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন লোকদেখানো উদ্বোধনের মাধ্যমে পাউবো ও জেলা প্রশাসন কৃষকদের নেতিবাচক বার্তা দিয়েছেন। বিগত সময়েও এমনটা হয়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই- এবারও যদি নির্ধারিত সময়ের আগে বাঁধের কাজ শেষ না করা হয় আর এতে কৃষকের ফসল ঝুঁকিতে থাকে তাহলে কৃষকদের সাথে নিয়ে আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। আমরা দাবি করবো সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এখনই সতর্ক হবেন।
অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, হাওর থেকে পানি না নামায় কাজ শুরু করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর জেলার প্রতি উপজেলায় বাঁধের কাজ উদ্বোধন হয়েছে বলে জানান তিনি। নিয়ম রক্ষায় বাঁধের কাজে লোকদেখানো উদ্বোধনের ব্যাপারে তিনি বলেন, পানি নামলে পুরোদমে কাজ শুরু হবে। তখন বাঁধে সাইনবোর্ড থাকবে, সার্বক্ষণিক শ্রমিকও থাকবে।