শহীদনূর আহমেদ ::
সুনামগঞ্জ জেলায় এবার ২ লাখ ২৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। জেলার বিভিন্ন হাওরে পুরোদমে চলছে বোরো ধান আবাদের প্রাথমিক প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে বীজতলা প্রস্তুত করেছেন কৃষকরা। আর সপ্তাহ দুয়েক পরে জেলার বিভিন্ন হাওরে শুরু হবে চারা রোপণের কাজ। এদিকে, বোরো ফসলের সুরক্ষায় প্রতিবছরের মতো এবারও বাঁধ নির্মাণকাজের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। সবকিছু ঠিক থাকলে নিয়ম অনুযায়ী আগামীকাল ১৫ ডিসেম্বর বাঁধ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ১০০৪ কিলোমিটার বাঁধ সার্ভে করা হয়েছে। যার মধ্যে ৫৮৮ কিলোমিটার পরিমাণ বাঁধে সংস্কার ও ভাঙ্গা বন্ধকরণের কাজ করবে পাউবো। সমপরিমাণ বাঁধ নির্মাণের লক্ষ্যে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৭৫টি পিআইসির অনুমোদন দিয়েছে জেলা কাবিটা বাস্তবায়ন কমিটি। এতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। প্রাথমিক পর্যায়ে ৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। আগামীকাল ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে বোরো ফসলের সুরক্ষায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধ নির্মাণকাজের বাস্তবায়ন চান হাওরের কৃষকরা। বিগত সময়ের মতো বাঁধ নির্মাণকাজের অনিয়ম-দুর্নীতি এবং দলীয়করণমুক্ত রাখার দাবি কৃষকদের।
কৃষকরা জানিয়েছেন, বিগত বছরগুলোতে বাঁধ নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কাজের বাস্তবায়ন না হওয়ায় ফসলের সুরক্ষা নিয়ে কৃষকদের শঙ্কায় থাকতে হয়েছে। দায়িত্বরত ব্যক্তিদের উদাসীনতা ও নজরদারির অভাবে নির্ধারিত সময়ে কাজ না হওয়ায় অকাল বন্যায় হারাতে হয়েছে ফসল। তাই যথাযথ মনিটরিং ও সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে নির্ধারিত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজে বাস্তবায়ন চান কৃষকরা।
অপরদিকে বাঁধ নির্মাণকাজে কোনো ধরনের গাফিলতি কিংবা অনিয়ম সহ্য করা হবে না বলে জানিয়েছেন কৃষক ও হাওরের সংগঠন হাওর বাঁচাও আন্দোলন।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, বিগত সময়গুলো হাওরে বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি হয়ে আসছিল। এ নিয়ে আমরা সব সময় প্রতিবাদ করেছি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনেকবার আদালতে দ্বারস্থ হয়েছি। আমরা দাবি করবো এবার যেনো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হয়। যারা বাঁধের কাজে অনিয়ম করবে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। নির্মাণকাজে মনিটরিং জোরদার করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রশাসনকে সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, এখন পর্যন্ত ৬৭৫টি পিআইসির অনুমোদন দিয়েছে জেলা কমিটি। যার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ১২ কোটি টাকা। ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করা হবে। তবে হাওরে পানি না নামায় একযোগে কাজ শুরু করা যাবে না।