খবরে প্রকাশ, হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে বেড়েই চলেছে প্রকল্প এবং এতে করে সরকারি অর্থ অপচয় কিংবা লোপাটের শঙ্কাও বাড়ছে। গত শুক্রবারের (১৩ ডিসেম্বর ২০২৪) দৈনিক সুনামকণ্ঠের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “পানিসম্পদ, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সম্প্র্রতি হাওর পরিদর্শনে এসে অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত ফসলরক্ষা বাঁধের প্রকল্প গ্রহণ না করার স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন। জেলায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়াও বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে নিয়োজিত উপজেলা কমিটিকেও অতিরিক্ত, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এসব নির্দেশনার পরও সংশ্লিষ্টরা তা মানছেন না। বেড়েই চলছে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের তালিকা। চূড়ান্ত প্রকল্পগুলো উন্মুক্ত না করে গোপন রাখা হয়েছে এমন অভিযোগও উঠেছে। প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্টরা ৬শ প্রকল্প নেওয়া হবে বললেও গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অনুমোদিত প্রকল্পের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৭৫টি। এই সংখ্যা সাতশর ঘরে পৌঁছে যাবে বলে আভাস পাওয়া গেছে।”
প্রতিবেদন থেকে উদ্ধৃতি একটু দীর্ঘ হয়ে গেলো, কিন্তু অকারণে নয়। এতে করে অবশ্যই বুঝা যাবে যে, প্রতি বছরের মতো এবারেও ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে ফসলরক্ষা নয় বরং ফসলরক্ষার নামে অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণের মওকা সৃষ্টি করে বরাদ্দের টাকা আত্মসাতকরণের প্রকল্প বাস্তবায়নকেই প্রাধান্য দেওয়ার মতলব আঁটা হচ্ছে যথারীতি, সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে। গত বছর সমগ্র জেলায় ৭৩৪টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। তন্মধ্যে শতাধিক অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত বলে সংবাদ সম্মেলন, সমাবেশ ও স্মারকলিপি দিয়ে প্রতিবাদ করেছিল হাওর বাঁচাও আন্দোলন। তখন অভিযোগ উঠেছিল যে, অতিরিক্ত এই প্রকল্পের পাশাপাশি অল্প ক্ষতিপ্রস্ত, অক্ষত প্রকল্পেও সমান বরাদ্দ দিয়ে সরকারি অর্থ হাতানোর পাঁয়তারা করা হয়। হাবভাবে এবারও মনে হচ্ছে তার কোনও ব্যতিক্রম হবে না।
পাউবো তার জন্মলগ্ন থেকেই বরাদ্দের টাকা মারার কলাকৌশল প্রয়োগে দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে আসছে। ‘সরকার কা মাল দরিয়া মে ঢাল’ নীতির প্রয়োগ করে তারা নিজেরাই দরিয়া হয়ে উঠছে। বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ যে উঠেনি এমনও নয়। কিন্তু ইতিহাস বলছে, এই দেশে প্রশাসনের হয়ে অভিযোগে কর্ণপাত করার এবং অভিযোগ অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কেউ নেই। অন্তত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যাপকতা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করেছে যে, এ দেশে সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানই ‘সরকার কা মাল মরিয়া মে ঢাল’ নীতির অনুসারী হয়ে আমলাতান্ত্রিক প্রভুত্বকে প্রতিষ্ঠা করেছে এবং ব্যতিক্রম বাদে প্রতিষ্ঠানরে সমগ্র জনবল মাল বিসর্জনের দরিয়া হয়ে গিয়ে সমগ্র প্রশাসনই চোরতন্ত্রের আখড়ায় পর্যবসিত হয়েছে। প্রকারান্তরে মাঠে-ময়দানে ও কল-করাখানায় সরাসরি উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জনসমাজ সরাসরি উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন পরগাছারূপ চোরসম্প্রদায়কে খাইয়ে-পরিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে, যারা শারীরিক পরিশ্রম করে না, মানসিক পরিশ্রম করে এবং এই মানসিক পরিশ্রমকে তারা জনসমাজকে শোষণ ও শাসন করার কাজে লাগায়, দেশের উন্নতির নামে নিজেদের উন্নতি করে এবং সে-উন্নতির সরানির্যাস বিদেশে পাচার করে, বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দেয়।
অভিজ্ঞমহলের কেউ কেউ মনে করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পাউবো ও পাউবো সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করাসহ দেশের উন্নতির নামে বিদেশে সম্পদ পাচারের ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করে জনসমাজের ক্যাল্যাণে আর্থসামাজিক কাঠামোটি বদলে দেবার কার্যক্রমের সূত্রপাত করবেন।