আমাদের দেশে একটি মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। এমন গৌরবের ইতিহাস বিশ্বে বিরল। আমরা মুক্তিযোদ্ধোদেরকে বীর বলে বিখ্যাত করেছিলাম, দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানের শিরোপা দিয়েছিলাম। এই দেশে এটি একটি সামাজিক মর্যাদার প্রতীক। এই সামাজিক মর্যাদা অবৈধ ও অন্যায়ভাবে ভোগ করার জন্যে যারা মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধা সেজে সুবিধা নিয়েছে তারা কেবল মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদার অবমাননা করেনি, জাতির সঙ্গে ক্ষমার অযোগ্য প্রতারণার অপরাধসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
এটি একটি জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যা নিরসনের প্রশ্নে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, “মুক্তিযুদ্ধ না করেও যারা মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছে, তারা সনদ বাতিলের আবেদন করে তালিকা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিলে সাধারণ ক্ষমা পাবে। অন্যথায় প্রতারণার দায়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গণমাধ্যমে এমন খবর প্রচারিত হয়েছে। গত বুধবার (১১ ডিসেম্বর ২০২৪) শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মহান বিজয় দিবস এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন উপদেষ্টা। এবংবিধ কার্যক্রম গ্রহণের জন্যে উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাই এবং সমর্থন করি।
বিগত সরকারগুলো এই প্রতারণাকে প্রশ্রয় দিয়েছে বলা যায়, অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। অভিযোগ যে উঠেনি এমন নয়, কিন্তু তোড়জোর দেখালেও কার্যকর কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। জাতি চায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের উপযুক্ত শাস্তি হোক, কোনওভাবেই যেনো তাদের কেউ রেহাই না পেয়ে যায়। ক্ষমা করে দেওয়া মহৎ কাজ বটে, কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে সেটা আরও একটি অপরাধও হয়ে যেতে পারে, ভুলে গেলে চলবে না। অভিজ্ঞমহলের অভিমত এই যে, ‘মুক্তিযুদ্ধ না করেও যারা মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছে, তারা সনদ বাতিলের আবেদন করে তালিকা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিলে সাধারণ ক্ষমা পাবে।’ এবংবিধ আবেদনের প্রেক্ষিতে এদের ‘সাধারণ ক্ষমা’র মতো ব্যবস্থা নেওয়া সমীচীন নয়। কেউ কেউ এই অভিমতও ব্যক্ত করছেন যে, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শনাক্ত হয়ে যাওয়ার পর তার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে রেহাই দেওয়ার ব্যবস্থা নিতান্তই অর্থহীন, চোর ধরে চোরকে ছেড়ে দেওয়ার মতো ঘটনা। এতে করে বিচারিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে না, বরং অপরাধীকে রেহাই দেওয়ার অপরাধ সংঘটিত হবে।