শহীদনূর আহমেদ, ছাতক থেকে ফিরে ::
শিল্পনগরী ছাতকের নৌপথে টোল আদায়ের নামে অবাধে চলছে চাঁদাবাজি। সুরমা নদীর ছাতক-দোয়ারাবাজার নৌপথ থেকে প্রতিদিনই ৪-৫ স্থান থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র নামে পাথর-বালু ও চুনাপাথরবাহী বার্জ-কার্গো ও নৌকা থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একাধিক সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্র। এদিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে একটি মহলকে বার বার অবৈধ সুযোগ-সুবিধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সুনামগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ’র বন্দর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী বালু,পাথর ও চুনাপাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা জানান, ছাতক ও দোয়ারাবাজার নৌপথে চলন্ত কার্গো জাহাজ বাল্কহেড নৌকা মালবাহী থেকে বেনামি চাঁদা রশিদের মাধ্যমে দীর্ঘ ৪-৫ মাস ধরে নৌ শ্রমিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। ছাতকের ৩টি এবং দোয়ারাবাজার অংশে ২টি স্থান থেকে চলন্ত অবস্থায় ছোট ছোট নৌকার সাহায্যে চাঁদা উত্তোলন করে আসছে সংঘবদ্ধ চক্র। চাঁদাবাজ চক্রের কথা মতো চাঁদা না দিলে মারধর ও লুটপাটের শিকার হতে হয় নৌযানে থাকা মাঝিদের।
গত রবিবার সরেজমিনে ছাতকের নৌপথে সংবাদ সংগ্রহকালে এ প্রতিবেদকের ক্যামেরায় ধরা পড়ে চাঁদাবাজির দৃশ্য। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন (বিআইডব্লিউটিএ) নামে ‘মালিকানাহীন’ রশিদে একাধিক নৌযান থেকে চাঁদা তুলতে দেখা যায় অন্তত ৩টি স্থানে। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে নদী থেকে পালিয়ে যায় চাঁদাবাজ চক্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নৌযান শ্রমিক বলেন, নদীতে ৩ থেকে ৪টি স্থানে চাঁদা দিতে হয়। ছাতকে বিআইডব্লিউটিএ’র নামে একটি রশিদ দিয়ে নৌকা প্রতি ৮-৯ হাজার আদায় করা হয়। টাকা না দিলে মারধরের পাশাপাশি নৌকায় লুটপাট করা হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আবু হুরায়রা ছুরত বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র নির্দিষ্ট ঘাটে পণ্য লোড-আনলোড হলে টোল আদায় হওয়ার কথা। নির্ধারিত ঘাট ছাড়া অবৈধভাবে চলন্ত অবস্থায় মোট অঙ্কের টাকা নিচ্ছে একটা চক্র।
এদিকে নৌপথে চাঁদাবাজির নেপথ্যে বিআইডব্লিউটিএ’র কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে রয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ঘাটে বালু পাথর লোড-আনলোড হলে টোল আদায় করার কথা থাকলেও ‘স্পট কোটেশনের’ নামে একটি মহলকে চলন্ত নৌযান থেকে অনৈতিক সুযোগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত কর্মকর্তা সুব্রত রায়ের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানাযায়, ছাতক থেকে দোয়ারাবাজার পর্যন্ত সুরমা নদীতে পণ্যবাহী নৌযান থেকে টোল আদায়ের জন্য বিভিন্ন সময় বিআইডব্লিউটিএ ইজারা প্রদান করে। তবে গত ২৪ অক্টোবর ছাতকের ম-লীভোগ এলাকার সোহাগ আহমদ নামের এক ব্যবসায়ী উচ্চ আদালতে রিটপিটিশন দায়ের করেন। এরই প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ২৪ অক্টোবর থেকে ২ মাসের জন্য ইজারা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু উচ্চ আদালতে এই নির্দেশনা উপেক্ষা করে সুনামগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ থেকে এ পর্যন্ত ১৫ দিন করে ২০ থেকে ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ২ বার স্পট কোটেশন প্রদান করা হয়। স্পট কোটেশন নিয়েও দরপত্রদাতারা বিআইডব্লিউটিএ’র বন্দর কর্মকর্তা সুব্রত রায়ের বিরুদ্ধে হয়রানি ও অনিয়মের অভিযোগ আনেন। এদিকে উচ্চ আদালতের স্থগিত আদেশ চলতি মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত বলবৎ থাকলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙ্গিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে টোল আদায় করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সিন্ডিকেট।
বালু পাথর ব্যবসায়ী নাজমুল হাসান জুয়েল বলেন, সুনামগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ গেল ১৩ নভেম্বর দরপত্র আহ্বান করেন। আমি সিডিউল অনুযায়ী দরপত্রে অশংগ্রহণ করি। বন্দর কর্মকর্তা সুব্রত রায় অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে বরাবরের মতো ১৩ তারিখের দরপত্র সোহাগকে পাইয়ে দেন। ২৮ নভেম্বর পুনরায় দরপত্র আহ্বান করলে আমি সেটিতেও অংশগ্রহণ করি। কিন্তু আদালতের দোহাই তাৎক্ষণিক নোটিশ দিয়ে দরপত্র স্থগিত করে দেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আদালতের স্থগিত আদেশ থাকা সত্ত্বেও কেনো একাধিকবার স্পট কোটেশন দেয়া হলো?
জসিম উদ্দিন সালমান আহমদ নামের আরেক পাথর ব্যবসায়ী বলেন, স্পট কোটেশনের নামে বন্দর কর্মকর্তা বড় ধরনের অনিয়ম করেছেন। উচ্চ আদালত টোল আদায়ের স্থগিতাদেশ দিলেও সেটি মানেননি তিনি। বরং একাধিকবার দরপত্র আহ্বান করে একটি মহলকে চাঁদাবাজি করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ’র নৌবন্দর কর্মকর্তার সুব্রত রায় বলেন, আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কথা মতো দরপত্র আহ্বান করেছি। কিন্তু আদালতের নির্দেশনা অমান্য করায় এখন আমরারই সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে পারবো না। অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের প্রশ্ন করলে প্রতিবেদকের সাথে তর্কে জড়িয়ে স্থান ত্যাগ করেন তিনি।