দুর্নীতি দমনে অর্থনীতিকে জনসমাজের স্বার্থের অনুকূলে বদলে দিতে হবে
পত্রিকান্তরে (প্রথম আলো, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪) একটি সাক্ষাৎকরের শিরোনাম করা হয়েছে, ‘রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রে সংস্কার ছাড়া দুর্নীতি দমন অসম্ভব’। বলতে এক রত্তিও দ্বিধা নেই যে, বাক্যটি বুদ্ধিজীবিতার চূড়ান্ত প্রকর্ষকে প্রকাশ করেছে। রাজনীতির একটি নীতি হলো, অর্থনীতির গাঢ় অভিব্যক্তি হওয়ায় রাজনীতি অর্থনীতির সেবা করে তদুপযোগী ব্যবস্থাটির সমর্থন ও সংরক্ষণ মারফত। আলোচ্য বাক্যটিতে রাজনীতির এই নীতিরই প্রকাশ ঘটেছে। খেয়াল করতে হবে যে, ‘রাজনীতি ও আমলাতন্ত্র সংস্কার ছাড়া দুর্নীতি দমন অসম্ভব’ বলা হয়েছে, অথচ কথাটাকে কারকের ষষ্ঠী বিভক্তির ‘এর’ চিহ্ন ব্যবহার করে ‘রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রের (আমলাতন্ত্র+এর) সংস্কার ছাড়া দুর্নীতি দমন অসম্ভব’ বলা হয় নি, সাতিশয় সচেতনতার সঙ্গে, প্রকৃতপ্রস্তাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই। সাক্ষাৎকারের পরিসরে প্রস্তাবিত সংস্কার সম্পর্কে আপাতত অনুপুঙ্খ বয়ানবিস্তার করার অবকাশ এখানে নেই। কেবল বলি, যেহেতু ‘রাজনীতি হল অর্থনীতির গাঢ় অভিব্যক্তি ও সম্পূর্ণতা’, তাই বিদ্যমান অর্থনীতিকে বদলে না দিলে যায়মান রাজনীতিটা বদলে যাবে না। আর রাজনীতি না বদলে গেলে বিদ্যমান আমলাতন্ত্রও বদলাবে না। আর বিদ্যমান অমলাতন্ত্র না বদলালে দুর্নীতি দমন তো হবেই না বরং বাড়বে। সব কথার শেষ কথা হলো, যদি না অর্থনীতিকে জনসমাজের স্বার্থের অনুকূলে বদলে না দেওয়া যায়, তাহলে, ‘রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রে সংস্কার ছাড়া দুর্নীতি দমন অসম্ভব’ বাক্যটি অত্যন্ত ভদ্রভাবে বললেও বলতে হবে, ‘ভাজা বরফ’ -এর চেয়ে বেশি কীছু নয়। এটা এতোটাই অর্থহীন। দুর্নীতি দমন করতে হলে ‘রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রে সংস্কার’ নয়, আসলে অর্থনীতিকে বদলে দিতে হবে। যেমন সম্প্রতি (রোববার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ॥ বণিকবার্তা, পৃষ্ঠা : ১) সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেছেন, ‘রাষ্ট্রের কিছু খাতে এখন আর থেরাপি নয় সার্জারি করতে হবে’। যতো কথাই বলা হোক সারকথা হলো, ‘রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রে সংস্কার নয়, রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রের বদল ছাড়া দুর্নীতি দমন অসম্ভব, আর আবারও বলি, তার আগে বদলাতে হবে অর্থনীতিকে। ভুলে গেলে চলবে না, মুনাফামুখি মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু রেখে মুদ্রাস্ফীতি বা মূল্যস্ফীতির মতো স্বীকৃত দুর্নীতিকে আটকে দেওয়া যাবে না।