গণমাধ্যমে সংবাদ করা হয়েছে যে, সুনামগঞ্জের বাজারে সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে ঠিকই, কিন্তু দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরেই আছে। বলা হয়েছে, “বেশকিছু দিন ধরে সুনামগঞ্জের বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও দাম কমেনি। শীতকালীন নতুন সবজিকে ঘিরে ক্রেতাদের বাড়তি আকর্ষণ সৃষ্টি হলেও দাম স্থিতিশীল থাকায় হাঁসফাঁস অবস্থা সাধারণ মানুষের।” তারপর এও বলা হয়েছে, “স্থানীয় সবজির বেশিরভাগ বাইরে রপ্তানির কারণে বাজারে সবজির দাম কমে না।”
অভিজ্ঞমহলের ধারণা কিন্তু অন্যরকম। তাঁরা মনে করেন, সবজি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা শক্তিশালী চক্র সবজির দাম নিয়ন্ত্রণ করে। এই বিশেষ চক্রের বিনাশ না ঘটলে সবজির দাম সব সময়ই চড়া থাকবে এবং সবজি খাওয়ার বাড়তি খরচটা গিয়ে জমা পড়বে চক্রের ব্যবসায়ীদের পকেটে। যেহেতু আমাদের দেশের রাজনীতিক সমাজের প্রবল প্রভাবশালী সদস্যের সম্মেলনে গঠিত এইসব ব্যবসায়ী চক্রই আদতে সমস্ত রাজনীতিক ক্ষমতার অধিকারী, সে কারণে তাদেরকে উৎখাত করাটাও খুব একটা সহজ কাজ নয়। সুতরাং সবজিই বলুন অথবা অন্য কোন পণ্য, বাজারজাত যে কোনও পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করবে ব্যবসায়ী চক্র এবং জনসমাজকে চড়া দাম দিয়ে সে-সব কিনতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, মুনাফানির্ভর মুক্তবাজার অর্থনীতির নিয়ম এটাই। কারণে-অকারণে উত্তরোত্তর পণ্যের দাম বাড়বে এবং সেই বাড়ার আনুপাতিক হারের সঙ্গে তাল রেখে বাড়বে মানুষের বেঁচে থাকার দাম। কিন্তু বেঁচে থাকার বাড়তি মূল্যটা যাবে বাজার নিয়ন্ত্রক চক্র সদস্যদের পকেটে। এবং সকল পণ্যক্রেতার বেঁচে থাকাটা চক্রের স্বার্থে বেঁচে থাকা ভিন্ন অন্য কীছুই হবে না। অর্থাৎ আপাতত ভোক্তার জীবন মানে চক্রের জন্য সমর্পিত জীবন। সুতরাং বিদ্যমান সমাজসংস্থিতি জনসমাজের স্বার্থের অনুকূলে পাল্টাতে না পারলে বেঁচে থাকার জন্য আরও বেশি দাম দিতে হবে। আরও দুচারটে বৈষম্যবিরোধী জুলাই বিপ্লব করা হোক না কেন, অবস্থা পাল্টাবে না, পণ্যের দাম কমবে না। আসলে বিপ্লবকে সংঘটিত হতে হবে জনসমাজের স্বার্থে। তারপর আপাতত পূর্বভাষ্যোত্তর মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। কথায় কথা বাড়িয়ে বিতর্ক কিংবা তাত্ত্বিক বিপদ ডেকে আনা উচিত নয় এবং পরিশেষে জনসমাজের জন্য পরামর্শ একটাই : পণ্যের বাড়তি দাম পরিশোধের জন্য বেঁচে থাকুন, যাতে আপনার লোকসানের বদলে কেউ কেউ টাকার কুমির হতে পারেন।