স্টাফ রিপোর্টার ::
ছিল না আগের মতো কোনো মন্ত্রী, সংসদ সদস্য কিংবা প্রভাবশালী নেতাদের অনৈতিক চাপ। তাই স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং জবাবদিহিতার মধ্যে স¤পন্ন করা গেছে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া। আর এভাবেই সুনামগঞ্জে মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি পেলেন ৭২ জন। এদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, অন্য ৬ জন নারী।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা পুলিশ লাইন্স মিলনায়তনে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের চূড়ান্ত মেডিকেল রিপোর্ট প্রদান এবং একই সঙ্গে নতুনদের বরণ ও ভবিষ্যতের দায়িত্ব, কর্তব্য এবং পুলিশের আদর্শ বজায় রাখার বিষয়ে ব্রিফিং দেওয়া হয়।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, এবারের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শতভাগ স্বচ্ছতা, মেধা এবং শারীরিক যোগ্যতার ভিত্তিতে সুনামগঞ্জ থেকে ৭২ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের সন্তান, যারা কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে এই সাফল্য অর্জন করেছেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার আ.ফ.ম. আনোয়ার হোসেন খান, পিপিএম। সঞ্চালনায় ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) জাকির হোসাইন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহিদুল ইসলাম খান, স্থানীয় মিডিয়া প্রতিনিধিবৃন্দ এবং জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যগণ।
পুলিশ সুপার আ. ফ. ম. আনোয়ার হোসেন খান, পিপিএম তাঁর বক্তব্যে নির্বাচিত প্রার্থীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি সততা, নিষ্ঠা এবং পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের সম্মান বৃদ্ধিতে নির্বাচিত প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার সকল ধাপ যোগ্যতা ও মেধাভিত্তিক সঠিক নিয়মে স¤পন্ন করা হয়েছে। সমাজের নানা স্তরের মানুষ, বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের মেধাবী সন্তানেরা এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ পেয়েছেন। এ নিয়োগ তাদের জীবনে নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে।
নির্বাচিত প্রার্থীরা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। একটি স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাধারণ পরিবারের সন্তানদের স্বপ্ন পূরণের সুযোগ করে দেওয়ায় জেলা পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তারা।
নিয়োগপ্রাপ্ত শাল্লা উপজেলার বন্যা রাণী দাশ বলেন, আমার বাবা একজন কৃষক। তাঁর আয় দিয়ে আমাদের সংসার চলে। আমি মাত্র ১২০ টাকা খরচ করে নিয়োগ পেয়েছি। আমার পরিবার অনেক খুশি। আমি চাই আমি আমার পরিবার ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে।
জামলাগঞ্জ উপজেলার শর্মিলা বলেন, আমার বাবা একজন কাঠমিস্ত্রি। তিনি অনেক কষ্ট করে আমাদের মানুষ করেছেন। অভাব-অনটনের মধ্যেও আমাদের পড়াশোনা ছাড়ননি। পুলিশে আসার আগে অনেকেই বলতো পুলিশে নিয়োগ পেতে লাখ লাখ টাকা ঘুষ লাগে। কিন্তু আমি মাত্র ১২০ টাকায় যোগ্যতা দিয়ে নিয়োগ পেয়েছি।
সাইফুল ইসলাম নামের আরেক নিয়োগপ্রাপ্ত তরুণ বলেন, আমার বাবা মাদ্রাসার শিক্ষক। পুলিশে চাকরি করা ছিল আমার ও আমার বাবার জন্যে স্বপ্নের। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি পুলিশ বিভাগের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।
প্রেসবিফিংয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সুনামগঞ্জ জেলায় পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ সেপ্টেম্বর-২০২৪ এর প্রক্রিয়া ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে শুরু হয়। মোট ২৫১০ জন প্রার্থী এই প্রতিযোগিতামূলক নিয়োগে আবেদন করেন। ২৯ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত জেলা পুলিশ লাইন্সে অনুষ্ঠিত শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের মধ্যে ৫৭৪ জন সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষার জন্য মনোনীত হন। গত ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের মধ্যে ২০৩ জন কৃতকার্য হন। এই প্রার্থীরা পরবর্তীতে গত ১৯ ও ২০ নভেম্বর মনস্তাত্ত্বিক এবং মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। এরমধ্যে নিয়োগ পেয়েছেন ৭২ জন তরুণ-তরুণী।