সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টির তোড়জোর শুরু হয়েছে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় ফের সংঘটিত হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সংঘাত, যেমন মাঝে মাঝেই হয়ে থাকে, যদিও আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় তার পেছনে কোনও সাম্প্রদায়িক কারণ আছে কিন্তু আসলে সাম্প্রদায়িক নয় বরং থাকে রাজনীতিক কারণ।
অনাদিকাল থেকে এই ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন ধর্ম-গোত্র-সম্প্রদায়ের মানুষ কোনও ধরণের সংঘাতে জড়িয়ে না পড়ে মিলেমিশে একত্রে বসবাস করে আসছে। কিন্তু যখনই কোনও সাম্প্রদায়িক সংঘাত আবির্ভূত হয়েছে তার মূলে সম্প্রদায়গত কোনও স্বার্থ চরিতার্থকরণের কারণ সন্ধান করে পাওয়া যায় নি। সাম্প্রদায়িক সংঘাতের কারণ প্রকৃতপ্রস্তাবে সম্প্রদায়ের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য সাম্প্রদায়িকতা নয়, বরং সম্প্রদায়ের বাইরের কোনও রাজনীতিক বা আর্থনীতিক স্বার্থরক্ষার্থে সাম্প্রদায়িক সংঘাতগুলো ঘটানো হয়ে থাকে এবং অদ্যাবধি তাই হচ্ছে।
শুনা যাচ্ছে, ছাতকে সাম্প্রদায়িক সম্পীতির অবনতি ঘটেছে। হঠাৎ করে আবির্ভূত এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অবনতির কারণ কিন্তু ছাতকের সাধারণ মানুষের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সাম্প্রদায়িক কোনও স্বার্থের অনুপ্রেরণায় সংঘটিত হচ্ছে না। প্রতিবার বিশেষ কোনও রাজনীতিক কিংবা আর্থনীতিক স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশেষ মহলের উসকানিতে বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সংঘাত লাগিয়ে দেওয়া হয়। এতে জনসমাজের কোনও স্বার্থ জড়িত থাকে না, বরং সমাজের অধঃপতিত কোনও কোনও বিশেষ সুবিধালোভী কতিপয় মানুষের হাতে মোটা অঙ্কের তহবিল ধরিয়ে দিয়ে সংঘাত ঘটানোর তৎপরতা চলাতে নির্দেশ দেওয়া হয় এবং তারা সহজ-সরল ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মবিশ^াসকে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িক সংঘাতে জড়িয়ে নেয়। শুরু হয় ভাঙচুর, লুটপাট এবং শেষাবধি রক্তক্ষরণ। দেশে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী কর্মকা-ের পরিসরে রাজনীতিক অস্থিরতার উদ্ভব ঘটে এবং এই অস্থিরতার আড়ালে কায়েমি স্বার্থবাদীরা নিজেদের রাজনীতিক স্বার্থ হাসিল করে নেয়, জনসমাজ মাঝপথে অর্থবিত্ত ও প্রাণ খুইয়ে তথৈবচ অবস্থায় ফিরে যায়।
গত সোমবার (২ ডিসেম্বর ২০২৪) সুনামগঞ্জে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে। এতে সর্বস্তরের সুধিজনেরা বক্তব্য দিয়েছেন। সংবাদপ্রতিবেদনে তাঁদের নামোল্লেখসহ প্রদত্ত বক্তব্যের সারার্থ তোলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনের শেষে। বলা হয়েছে, “উপস্থিত নেতৃবৃন্দ বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার ঐতিহ্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। ভবিষ্যতেও যেন তা বজায় থাকে। তৃতীয় পক্ষের কোন মহলের উস্কানিতে যেন অপ্রীতিকর কোন ঘটনার জন্ম না হয় সেদিকে সবাইকে নজর রাখতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে।” জনসমাজকে ‘সতর্ক’ থাকতে বলার জন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই এবং সেই সঙ্গে এও বলি যে, উল্লেখিত ‘তৃতীয় পক্ষের কোন মহলের উস্কানি’ ঠেকাতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। আমরা প্রশাসনের কাছে এমনটাই আশা করছি।
যদিও অভিজ্ঞ মহলের কেউ কেউ মনে করেন যে, যা হবার তাই হবে এবং অতীতে তাই হয়ে এসেছে। দুই দুই বার দেশ ভাগ, বহুবার মন্দির ভাঙা, সম্পত্তি লুট, বাড়িঘর দখল ইত্যাদি হয়েছে এবং রক্তপাত হয়েছে দেদার। মনে হচ্ছে এবার হবে একটু ভিন্ন স্বার্থ আদায়ের লক্ষ্যে, অর্থাৎ বাংলাদেশকে ভূরাজনীতিক স্বার্থে ব্যবহারের ক্ষেত্রপরিস্থিতি তৈরি করার দুরভিসন্ধিতে, যা সাম্প্রদায়িক কোনও কারণ নয়। একটা কথা সকলকেই বুঝতে হবে যে, সাম্প্রদায়িক সংঘাত কোনও সাম্প্রদায়িক কারণে সৃষ্টি হয় না, সৃষ্টি হয় রাজনীতিক কারণে এবং ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় মাত্র।