শহীদনূর আহমেদ ও তানভীর আহমেদ :: সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ডলুরা সীমান্তের বিশাল এলাকাজুড়ে দেখা মিলবে অবৈধ পাথরের রাজ্য। ধোপাজান-চলতি নদীর দুই পাড়ে স্তূপ করে রাখা হয়েছে কয়েক লাখ ঘনফুট পাথর। প্রতিদিন বাড়ছে পাথরের পরিমাণ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইজারাবিহীন ধোপাজান-চলতি নদীতে বালু পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকলেও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধ পন্থায় পাথর উত্তোলন করছে একাধিক পাথরখেকো সিন্ডিকেট। স্থানীয় শ্রমিকরা নদীতে যে পাথর উত্তোলন করেন তা সিন্ডিকেটের কাছে স্বল্প দামে বিক্রি করে থাকেন। কম দামে কেনা এসব অবৈধ পাথর নদীর পাড়ে স্তূপ করে রাখে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। প্রশাসনের চোখ সামনেই এসব পাথর ট্রলি কিংবা ট্রাকের সাহায্যে নিয়ে যাওয়া হয় সুরমা নদীতীরবর্তী ক্রাশারমিলে। ক্রাশারমিলে প্রক্রিয়াজাত করে স্থানীয় অসাধু পাথর ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পাচার করা হয় এসব পাথর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে সরকারের এই সম্পদ লুট হলেও রহস্যজনক কারণে এটি বন্ধে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। শুক্রবার সরেজমিনে ডলুরা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ধোপাজান-চলতি নদীর দুইপাড় সদর ও বিশ্বম্ভরপুর অংশে ছোট-বড় কয়েকশ পাথরের স্তূপ। শ্রমিকরা নদী থেকে পাথর উত্তোলন করে তা এসব স্তূপে রাখছেন। প্রতি ঘনফুট পাথর ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকেন বলে জানান একাধিক শ্রমিক। প্রতিটি স্তূপের রয়েছে আলাদা আলাদা ‘মালিক’। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে একাধিক ট্রলি বা ট্রাকে করে স্তূপের পাথর নিয়ে যাওয়া হয় অন্যত্র। শ্রমিক ও পাথর সিন্ডিকেটের এমন পাথর লুটের হরহামেশা চলতে থাকলেও বাঁধা দিতে দেখা যায়নি সীমান্তে দায়িত্বে থাকা বিজিবিকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, পেটের দায়ে আমরা নদীতে যাই। নদীতে সারাদিন যে পাথর তুলি তা বিকালে এনে নদীর পাড়ে বিক্রি করি। ৪০-৫০ টাকা ফুটে এসব পাথর কিনেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় আরেক বাসিন্দা জানান, পাথর ব্যবসার সাথে এলাকার প্রভাবশালীদের বেশিরভাগই জড়িত রয়েছেন। তারা ট্রাকে করে ক্রাশার মিলে পাথর নিয়ে যান। সড়ক পথে রাতের বেলায় পাথর পাচার হয়ে থাকে বলে জানান তিনি। ডলুরা সীমান্ত এলাকায় স্তূপকৃত পাথরকে অবৈধ উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, বিজিবি জানিয়েছে এসব পাথর ভারত থেকে বাংলাদেশ এসেছে। শ্রমিক উত্তোলন করে পাড়ে রাখেন। ধোপাজান-চলতি নদী বন্ধ। নদীতে বালি-পাথর উত্তোলনের নির্দেশনা নাই। তাই এই পাথর জব্দ করে নিলামও দেয়া যাবে না। কেননা পাথর নিলাম দিলে এই কাগজের উপর ভর করে সারা বছর পাথর আনা হবে। তাই এই পাথর অবৈধ হিসেবেই থাকবে। কেউ এই পাথর পাচার করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।