গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে, “বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ বলয়ের মধ্যে থাকা সাবেক মন্ত্রীসহ রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে যুক্তরাজ্যে। দেশটির আবাসন খাতে তাদের বিনিয়োগ করা সম্পত্তির পরিমাণ ৪০ কোটি পাউন্ডের (৬ হাজার কোটি টাকা) বেশি। বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ দিয়ে এসব সম্পত্তি কেনা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।”
দেশের ভেতরে কতিপয়ের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার সমাজসংস্থিতি বজায় রেখে রাজনীতি পরিচালিত হলে এমন সম্পদ পাচার তো হবেই। যে-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গণতন্ত্রকে স্বৈরাচারীর পদলেহী গোলামে পর্যবসিত করা হয়, সেখানে বার বার ভোট কারচুপি করে একজন প্রধানমন্ত্রী কয়েকজন মন্ত্রী নিয়ে একটি লুটেরা চক্র গড়ে তোলে শাসনের নামে উন্নয়নের বুলি আওড়িয়ে সমগ্র দেশটাকেই সম্পদ শোষণের কারখানা বানিয়ে ফেলতে পারেন, সেখানে এমন সম্পদ পাচারই কেবল হতে পারে অন্য কীছু নয়। এই দেশে ইতোমধ্যে বার বার এমন হওয়ার উদাহরণ প্রত্যক্ষ করা গেছে। মানুষের স্বাভাবিক দ্রোহকে আইনি অস্ত্রের সংহারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে স্থবির করে দেওয়া হয়েছে। দেশের রাজনীতিক সমাজ এই ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলেছেন অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। তাঁদের প্রতিপক্ষ যাঁরা পুঁজিবাদের বিরোধিতা করে জনগণের ক্ষমতায়নে পুঁজিবাদী শোষণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পরিহার করে বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা বলেছেন তাঁদেরকে নির্মমভাবে প্রতিহত করা হয়েছে। এমনকি আত্মগোপনের আড়াল ভেদ করে ধরে এনে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলা হয়েছে। এই দেশে সন্ত্রাসীদের রাজনীতিকভাবে লালন-পালন-পোষণ করা হয়েছে, কারণ সন্ত্রাসীরাই রাজনীতিক সমাজের ব্যক্তিগত সম্পদ সঞ্চয়ের হাতিয়ার। বিপরীতে বামপন্থীদেরকে একটুকুও ছাড় দেওয়া হয় নি। সিরাজ সিকদার কিংবা মফক্করকে মেরে ফেলা হয়েছে। শোষক ও শোষিতের এই দ্বান্দ্বিক রাজনীতির ইতিহাস আসলেই অনেক পুরনো।
উক্ত সংবাদপ্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি শোষকদের সম্পদের পাহাড় আবিষ্কারের কথা বলা হয়েছে। ইতিহাস বলছে ভারতবর্ষ থেকে এমন সম্পদ পাচার শুরু হয়েছিল সেই ১৭৫৭ সালেরও আগে থেকে, যা এখনও থামেনি। ১৯৪৭ সালের আগে ইংরেজরা সরাসরি সম্পদ পাচার করতো, এখন তাদের পক্ষ হয়ে নিযুক্ত দালালরা সেটা করে, কোনও কোনও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী যাদেরকে এখানকার লুটেরা রাজনীতিক সমাজের প্রতিনিধি বলে চিহ্নিত করে থাকেন। এই সম্পদ পাচারের ব্যবস্থার অন্য নাম দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দেওয়া, দেশে এক ইঞ্চি মাটিও অনাবাদী রাখা হবে না মর্মে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে সুর তোলা এবং বছর শেষে যথারীতি দেশর জনসমাজের ঘাড়ে সিন্দাবাদের ভূতের মতো নামতে না চাওয়া মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্যস্ফীতির বিপদ চেপে বসা এবং বিদেশে দেশের কোনও কোনও রাজনীতিাবদ, আমলা, ব্যবসায়ী কিংবা সন্ত্রাসীর সম্পদের পাহাড় গজানো।
দেশের মানুষ আর এইসব পাচারকা-ের সাতকাহন শোনতে চান না। তাঁদের প্রত্যাশা এই যে, পাচারকৃত এইসব সম্পদ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থাসহ সম্পদ পাচার রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে তোলা হোক। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, সম্পদের ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের পথ খোলা রেখে সম্পদ পাচাররোধের ব্যবস্থা গড়ে তোলা কোনও উত্তম উপায় নয়।