বিশেষ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় এবার ৬ শতাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে প্রায় ১১০ কোটি টাকার প্রাথমিক ব্যয় হতে পারে। ৩০ নভেম্বর হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে যুক্ত জেলা কাবিটা মনিটরিং ও বাস্তবায়ন কমিটি ৩৮২টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে বলে জানিয়েছে ওই সূত্র। আগামী ১৫ ডিসেম্বর ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ করার কথা। তবে অতীতে কখনই নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু ও শেষ হয়নি বলে কৃষকদের অভিযোগ আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ছোট-বড়ো মিলিয়ে প্রায় ১৩৭টি হাওর রয়েছে সুনামগঞ্জে। এর মধ্যে ৫৩টি হাওরে বোরো ফসলরক্ষার জন্য ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ, সংস্কার করা হবে। একসময় ঠিকাদারের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ করা হলেও কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৮ সাল থেকে কৃষকদের নেতৃত্বে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী হাওরের জমির নিকটবর্তী কৃষক ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে যুক্ত থাকার কথা। অক্টোবর থেকে সার্ভে করে বাঁধের প্রকল্পের নকশা করেন পাউবো’র সার্ভেয়াররা। পাউবো জানিয়েছে- এ পর্যন্ত সার্ভেয়ারদের মাধ্যমে প্রায় ৯২ ভাগ বাঁধের সার্ভে করা হয়েছে। গতবছরের বাঁধ কি অবস্থায় আছে, কোথায় মাটি লাগবে, সংস্কার লাগবেÑতা সরেজমিন ঘুরে নকশা করা হচ্ছে। তবে প্রিওয়ার্কের এই নকশা ও প্রকল্প গ্রহণ অনুমোদন নিয়েও অনিয়ম ও দুর্নীতি হয় এমন অভিযোগ হাওর বাঁচাও আন্দোলন নেতৃবৃন্দের। পানি উন্নয়ন বোর্ড সার্ভেয়ারদের দিয়ে মনগড়া প্রিওয়ার্ক করে বিপুল বরাদ্দ দিয়ে পরবর্তীতে বরাদ্দ লোপাট করা হয় এমন অভিযোগ আছে। তাছাড়া প্রকৃত কৃষকদের বদলে মধ্য স্বত্ত্বভোগীরা পিআইসি হাতিয়ে নিয়ে বরাদ্দ লোপাট করে এমন অভিযোগ আছে কৃষকদের। সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগের মতে জেলায় ২০২৪-২০২৫ ফসলি মওসুমে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭০ ভাগ জমির বীজতলা তৈরির কাজ শেষ। আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে হাওরে ধান রোপণ শুরু হবে। এ বছর প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ধান উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দিরাই উপজেলার জয়পুর গ্রামের বড়ো কৃষক সৌমেন চৌধুরী বলেন, উদগল হাওর ও ছায়ার হাওরে আমাদের জমি রয়েছে। প্রতি বছরই আমাদের দাবি থাকে জমির প্রকৃত মালিক ও প্রকৃত কৃষকদের দিয়ে পিআইসি গঠনের জন্য। প্রকৃত কৃষকরা পিআইসিতে না থাকলে প্রিওয়ার্কের সময় বিভিন্ন গোষ্ঠী বাঁধের বদলে অপরিকল্পিত বাঁধের প্রকল্প গ্রহণ করিয়ে নেয়। এতে হাওরের ক্ষতি হয় ফসলও ঝুঁকিতে থাকে। তাই আমাদের দাবি ফসলরক্ষা বাঁধের জরিপের সময় কৃষকদের রাখতে হবে। পিআইসিতে দায়িত্ব দিতে হবে প্রকৃত কৃষকদের। হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, সুনামগঞ্জের হাওরের কৃষকদের বরাদ্দ লোপাটের জন্য একটি শ্রেণি প্রতি বছর অপেক্ষা করে। তারা ভুয়া, অপ্রয়োজনীয়, অল্প ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধেও পুরো বরাদ্দ দিয়ে সরকারে অর্থ লোপাট করে। এটা কোনভাবেই থামানো যাচ্ছেনা। আমাদের দাবি- প্রয়োজন ছাড়া যেন কোন প্রকল্প নেওয়া না হয়। না-হলে হাওরের ক্ষতি হবে, সরকারের অর্থও অপচয় হবে। সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, এবারের বোরো মওসুমে জেলায় প্রায় ১৩ লক্ষ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার কৃষককেদের বিনামূল্যে বীজ ও সারের ব্যবস্থা করেছে। এছাড়াও আমাদের প্রতিনিধিরা প্রতিনিয়ত মাঠে গিয়ে বোরো চাষাবাদ বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে হাওরে ধান লাগানোর কাজ শুরু হবে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ ও ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কমিটির জেলা সদস্য সচিব মামুন হাওলাদার বলেন, আমাদের সার্ভেয়াররা মাঠে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে তারা ৯২ ভাগ সার্ভের কাজ শেষে করেছেন। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই তারা সার্ভের কাজ শেষ করবেন। ১৫ ডিসেম্বর হাওরের বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, গতকাল জেলায় ৩৮২টি প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে। জেলা কমিটি প্রতিটি উপজেলা কমিটিকে নীতিমালা মেনে গণশুনানী করে প্রকল্প নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।