তানভীর আহমেদ ::
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, সুনামগঞ্জের বোরো ফসল অকাল বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে বাঁধের কাজ যথাসময়ে শুরু ও শেষ করতে হবে। পাশাপাশি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে কেউ অনিয়ম করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) বাস্তবায়ন সংক্রান্ত জেলার সংশ্লিষ্টদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান টাঙ্গুয়ার হাওরসহ বিভিন্ন হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
মতবিনিময় সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া এবং জেলায় কাবিটা কাজ বাস্তবায়নের সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশের ক্ষতি করে এবং ফসলরক্ষা বাঁধের বরাদ্দের নামে অহেতুক কোনো প্রকল্প নেওয়া হবে না। এক কথায় পরিবেশ রক্ষা করেই বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেই সাথে আমরা বাঁধ নির্মাণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ তদারকি করব। আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে বাঁধের কাজে কোনো ধরনের গাফিলতির কারণে কৃষকের সোনালী ধানের ক্ষতি না হয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরে দেখে এসেছি। বাঁধ ভেঙে ফসলের যে ক্ষতি হয় এবং যেসব বাঁধগুলো ভেঙে ক্ষতি হয়েছে, সে অনুযায়ী কোথায় শক্ত করে বাঁধ দিতে হবে এবং বাঁধ তৈরির ব্যবস্থা করতে হবে সেগুলো দেখব।
টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশে আর নেই উল্লেখ করে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে অনেক পর্যটকবাহী নৌকা আসে। নৌকার এত শব্দ, এত-এত প্লাস্টিক, পলিথিন এগুলোর নিয়ন্ত্রণ কীভাবে করা যায় সেটি খেয়াল রাখতে হবে। টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশে আর নেই। সেজন্য হাওরে ট্যুরিজম চলবে তবে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। কত জন আসবে, কীভাবে আসবে, প্লাস্টিক আনবে কি না এই বিষয়গুলো নিয়মের ভেতরে আনা হবে।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ৫টি খাল উদ্ধারের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, কামারখালসহ দ্রুত সময়ের মধ্যে শহরের এই খালগুলো উদ্ধার করে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। পরে তিনি খালগুলো উদ্ধারের জন্য জেলা প্রশাসন ও পৌরসভাকে নির্দেশ দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহিদুল ইসলাম খান, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার, জেলার বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী অফিসারগণ, পাউবোর উপ-সহকারী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগণ।
এর আগে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকালে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পানি স¤পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান। পরে দুপুরে তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওর পরিদর্শন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে সেখানেই একটি মতবিনিময় সভা করেন।
এ সময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সুনামগঞ্জের এবং হাওরাঞ্চলের লাখো লাখো মানুষ বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে কেউ অনিয়ম করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ শেষ করতে হবে। সেই সাথে ফসলরক্ষা বাঁধের বরাদ্দের নামে অহেতুক কোনো প্রকল্প নেওয়া হবে না। যা পরিবেশের ক্ষতি করে। এক কথা পরিবেশ রক্ষা করেই বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেই সাথে আমরা বাঁধ নির্মাণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ তদারকি করব।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, বাঁধের কাজের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের কাজ চলছে। প্রকল্প নির্ধারণে জরিপ হচ্ছে। কিন্তু পানি ধীরে নামছে। বইয়ে যে সময়ের কথা লেখা থাকে, সেটা তো প্রকৃতি মেনে চলে না। কাজে যাতে দেরি না হয়, ফসল যাতে ঝুঁকিতে না পড়ে সেটার জন্য আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হবে। কাজে অনিময় হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে। তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে বড় ধরনের বন্যা আসার আগে কৃষকরা সোনালী ধান ঘরে তুলতে পারেন।
টাঙ্গুয়ার হাওরে নিয়ন্ত্রিত পর্যটনের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এই হাওরের পরিবেশ, প্রতিবেশ রক্ষা করে সব করা হবে। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রশাসনসহ সব দপ্তরকে কাজ করতে হবে। কোনোভাবেই টাঙ্গুয়ার হাওরকে নষ্ট করা যাবে না। তেমনি হাওরে কোনো অপরিকল্পিত ফসলরক্ষা বাঁধ করাও যাবে না। কোনো বাঁধে যদি পানি প্রবাহে ও মৎস্য স¤পদের ক্ষতি হয় জানাবেন, ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাওরে নিয়ন্ত্রিত পর্যটন ব্যবসা গড়ে তুলে সবাইকে পরিবেশের বিষয়ে সচেতন রাখারও আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। পরে তিনি টাঙ্গুয়ার হাওরের বাঁধসহ বিভিন্ন হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, ১৩৪ হাওরের বোরো ধান রক্ষায় ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড।