স্টাফ রিপোর্টার ::
তাহিরপুরে পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করায় এবং দ্বিতীয় বিয়ের সম্মতি না দেয়ায় স্বামী ভাড়াটে লোক দিয়ে স্ত্রী’র ওপর হামলা করিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার দুপুরে উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের রাজাই গ্রামে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
অভিযোগ থেকে জানাযায়, গত সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উত্তর বড়দল ইউনিয়নের রাজাই গ্রামে ওই নারীর পিত্রালয়ে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ধারালো অস্ত্রের উপর্যুপরি আঘাতে ভিকটিম (৩১) ও পিতা মাইজ উদ্দিন (৭০) গুরুতর আহত হন। ঘটনার সময় তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা দৌড়ে এসে আহতদের উদ্ধার করে রাতেই তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আহতদের গুরুতর অবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন গ্রামের মুরব্বী আবুবকর সিদ্দিক, মোফাজ্জল হোসেন, নুরুল ইসলাম, আকবর আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন, হযরত আলী, সুরুজ মিয়া, নাজিম উদ্দিন, আব্দুল কাদির, রমজান আলী, এরশাদ মিয়া, আবুল কাশেম, শেফালী বেগম, শাহানা বেগম, আমেনা বেগম, ফরিদা বেগম, আয়েশা বেগম, ইমিনা বেগম, আছমা বেগম, আরপিনা আক্তার, খাদিজা বেগম, সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
মানববন্ধনে ভিকটিম (৩১) বলেন, তিনি জিসকা ফার্মাসিটিক্যালস এর রিপ্রেজেনটেটিভ হিসাবে চাকরি করতেন। ওই সময় বাংলাদেশ বর্ডারগার্ড (বিজিবি) ক্যা¤েপর অফিস সহকারী জিয়াউর রহমানের সাথে সম্পর্ক হয়। সে একই উপজেলার দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের বাগবাড়ি গ্রামের মরহুম মকরম আলীর ছেলে। পরে তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। বিবাহের পর স্বামী জিয়াউর রহমান তাকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে এসে থাকতো। এলাকার জামাই হিসাবে স্থানীয় মানুষের সাথে পরিচিত হয় সে। ওই সময় কৌশলে মেডিসিন খাইয়ে দুই মাসের গর্ভ নষ্ট করায়। হঠাৎ পরিবারের সম্মতি নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করতে চায় স্বামী জিয়াউর রহমান। তখন তাকে সম্মতি না দেয়ায় দিনের পর দিন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। স্বামী জিয়াউর রহমানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পারিবারিক আদালতে মামলা করতে বাধ্য হন। এরপর পিত্রালয়ে চলে আসেন তিনি। তখন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে।
নির্যাতনের শিকার ওই নারী আরও বলেন, মামলা তুলে না নেওয়ায় গত ১৮ নভেম্বর সোমবার দিবাগত রাত অনুমান ২ টায় আমাদের বসতঘরের বাবা রুমের দরজা খুলে বাইরে প্রশাব করতে গেলে এই সুযোগে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে দুষ্কৃতকারীরা। তারপর আমাকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যায় দুষ্কৃতকারীরা। এই ঘটনায় গত ২০ নভেম্বর তাহিরপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ভিকটিম আমাদের গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্যের শিক্ষিত মেয়ে। তার জামাই জিয়াউর রহমান রাজাই গ্রামের মানুষের সাথে বেশ মিশে গিয়েছিল। পরে শুনি নানা নির্যাতনের খবর। আমরা এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার চাই।
তাহিরপুর থানার তদন্তকারী অফিসার মো. আমির হোসেন জানান, গভীর রাতে কৌশলে দরজা খুলে বসতঘরের ভেতরে ঢুকে ওই নারীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। হামলার মূল রহস্য তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
তাহিরপুর থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত) মো. দেলোয়ার হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, আহত নারী ২০ (নভেম্বর) বিকাল ৪টার সময় ৪ জনকে সাক্ষী করে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।