গণমাধ্যমান্তরে বলাবলি শুরু হয়ে গেছে যে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। গতকালের (২৩ নভেম্বর ২০২৪) একটি পত্রিকার একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল, “তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে নিরাপদ থাকবে যেসব দেশ” এবং প্রতিবেদনের শুরুতেই বলা হয়েছে, “তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। ঠিক এমন বিস্ফোরক বার্তাই দিয়েছেন ইউক্রেনের সাবেক সেনাপ্রধান। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, উত্তর কোরিয়ার দাপাদাপি অনেক সময়ই প্রশ্ন জাগিয়ে তুলছে, আসলেই কি শুরু হয়ে গেছে আরেকটা বিশ্বযুদ্ধ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হিসাব চলে আসে কোন কোন দেশ এই যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়ছে আর নিরাপদ থাকছেই বা কারা।”
কেউ কেউ মনে করেন, কেউ নিরাপদ থাকবে না এবং বাংলাদেশ রণভূমির কেন্দ্রে পর্যবসিত হতে পারে। এমন আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আর এমন হলে আমাদের দেশের রাজনীতিক দলগুলো সে-দায় এড়াতে পারবেন না এবং তাদের অদূরদর্শিতা প্রতিপন্ন হবে। অন্তত বর্তমান রাজনীতিক পর্যায় পরিস্থিতি তাই প্রমাণ করে।
বিশ্বযুদ্ধের মতো বিষয় কল্পনায় এলেও ভয়ে গা-শিউরে উঠে। অথচ বিশে^র রাজনীতি তথা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করেন যে-সব নেতারা তাঁরা নির্বিঘ্নে বিশ্ব যুদ্ধের দিকেই এগিয়ে চলেছেন। বলা হয় : রাজনীতি অর্থনীতির ঘনীভূত রূপ এবং রাজনীতির চূড়ান্ত পরিণতি যুদ্ধ। তাঁরা এসব কথা জানেন না, এমন ভাবা বোকামি, তাঁরা সবই জানেন এবং জানেন বলেই সামা¤্রাজ্যবাদী অর্থনীতির অনিবার্য পরিণতি বিশ^জুড়ে আর্থনীতিক আধিপত্য লাভের চূড়ান্ত কর্মসূচি তৃতীয় বিশ^যুদ্ধ বাঁধাতে কসুর করছেন না। তাঁদের মুনাফা চাই। বলা বাহুল্য যে, ইতোমধ্যে পুঁজিবাদের নিয়মে মুনাফা অর্জনের নীতিকে অনুসরণ করে করে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করতে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে সা¤্রাজ্যবাদী দেশগুলোর পক্ষ থেকে। তাঁরা পারমাণবিক বোমা বানিয়ে মজুদ করে রেখেছেন, পারমাণবিক বোমার আঘাত থেকে রক্ষা পেতে মাটির নিচে শহর গড়ে তুলেছেন এবং যুদ্ধক্ষেত্র রপ্তানি করে দিয়েছেন অন্য কোনও দেশে। যেমন ইউক্রেন কিংবা ফিলিস্তিনের মতো দেশে এবং এমনিভাবে অন্য কোনও দেশে যুদ্ধক্ষেত্র রপ্তানি করা হতেই থাকবে। বৈঠকি চালে কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশে যুদ্ধক্ষেত্র রপ্তানি হওয়ার পরিসর ইতোমধ্যেই প্রস্তুত হয়ে গেছে। যাদের মাটির নিচে ঘর নেই, পারমাণবিক অস্ত্র নেই, পারমাণবিক অস্ত্রের আঘাত প্রতিহত করার ব্যবস্থা নেই, তারা মরবে। এতে ওইসব সা¤্রাজ্যবাদী দেশের রাজনীতিক সমাজের কোনও মাথা ব্যথ্যা নেই।
আসলেই পুঁজিবাদ ইতোমধ্যে বিমানবিক বিশ^ গড়ে তুলেছে। বিশ্বমানবতার এক অংশ আর এক অংশকে খুন করার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চলেছে, যাকে বলা হচ্ছে তৃতীয় বিশ^যুদ্ধ। যে পুঁজিবাদ সা¤্রাজ্যবাদে পরিণত হয়েছে, সেই পুঁজিবাদকে প্রতিহত করা না গেলে বিশ^মানবতাকে ভয়ঙ্কর পরিণতি প্রত্যক্ষ করতে হবে. তাতে কোনও সন্দেহ নেই। পুঁজিবাদী আর্থসামাজিক ব্যবস্থার পরিসরে ব্যক্তিমালিকানার মোহগ্রস্ত মানুষ আপনারা হিরোসিমা ও নাগাসাকির চেয়েও লক্ষ গুণ ভয়ঙ্কর পরিণতির জন্য অপেক্ষা করুন, কারণ আপনারা ব্যক্তিমালিকানায় সম্পদসংগ্রহের অপরাধে সারাজীবন নিমগ্ন ছিলেন, সামাজিক মালিকানাকে নাপছন্দ করেছেন। কিন্তু মনে রাখবেন, প্রত্যক্ষতাকে পুনরুৎপাদনের সুযোগ আপনাদেরকে দেওয়া হবে না। আফসোস করার সময়টুকুর জন্যে দম নেওয়ার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হবেন।
উপসংহারে একটি ভবিষ্যদ্বাণীর কথা না বলে পারছি না। কেউ কেউ বলেন, তৃতীয় বিশ^যুদ্ধের পর পৃথিবীতে নাকি আবার বর্বর যুগের মতো অবস্থা ফিরে আসবে। ইন্টারনেট তো দিল্লি দূরস্থ, মানুষের হাতে যুদ্ধ করার জন্যে লাঠি, ধনুকের চেয়ে উন্নত কোনও অস্ত্র থাকবে না।