স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ও জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের আওতাধীন ধোপাজান-চলতি নদীর পথ বদলে চলছে বালু-পাথর লুট। স্থানীয়রা জানান, অবৈধভাবে বালু-পাথর বহনকারী যানবাহন চলাচল মাত্র ৫ দিন বন্ধ থাকার পর ২৫ অক্টোবর থেকে পুনরায় শুরু হয়েছে লুট।
অনুসন্ধানে জানাযায়, ধোপাজান-চলতি নদীর জলপথ ছেড়ে বালু-পাথরবাহী অবৈধ পিকআপ-ট্রলি ডলুরা থেকে সড়কপথে কৃষ্ণনগর বা মঙ্গলকাটা বাজার হয়ে হালুয়ারঘাট থেকে মইনপুর গ্রামের সুরমা নদীরপাড়ে পৌঁছে। এখান থেকে বালু-পাথর নৌযানে ভর্তি হয়ে জেলার বাইরে বিক্রি হচ্ছে। দিনে ও রাতে চলছে পাথরবোঝাই অবৈধ পিকআপ ও ট্রলি। এই পাথরবোঝাই যানবাহন পাহারা দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছেন সিন্ডিকেট সদস্যরা।
গত বুধবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ডলুরা চলতি নদীর তীরজুড়ে পাথরের অসংখ্য টিলাসম স্তূপ। কয়েকশত শ্রমিক পাথর উত্তোলন করছেন। পাথর উত্তোলনের স্থান দেখাশোনা করছেন পাথর ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট সদস্যরা। ওই স্থানে আছেন বিজিবি সদস্যরাও টহলে উপস্থিত। এসব বালু-পাথর উত্তোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীর প্রধান দিলোয়ার হোসেন, সাদেক মিয়া ও কাজল মিয়া। তারা পূর্ব ডলুরা গ্রামের বাসিন্দা। তারাই মূলত রাতে ও দিনে বালু-পাথর উত্তোলনে ব্যবহার করছে নদীতে অবৈধ ড্রেজার।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা নদীতে রাতে ও দিনে ড্রেজার চালনার মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন করে চলেছেন। এই বালু-পাথর সহজ ও নিরাপদ রাস্তা হিসাবে মালবাহী যানবাহন রাত ও দিনে দুই ইউনিয়নের বিভিন্ন রাস্তা ব্যবহার করে আসছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হেকিম উদ্দিন বলেন, মাত্র ৫ দিন বন্ধ থাকার পর বালু-পাথরবাহী অবৈধ যানবাহন দিনে ও রাতে চলাচল করছে। গাড়ি চলাচলের শব্দে রাতে ঘুমাতেপারছি না। দিনের বেলায় রাস্তায় চলাচলে নিরাপত্তা নেই। বেপরোয়া গাড়ি চলাচলে দুর্ঘটনাও ঘটছে।
রাফি আহমদ বলেন, ধোপাজান-চলতি নদীর বালু-পাথর লুট বন্ধ হয়নি। নদীপথ ছেড়ে এখন সড়কপথে বালু-পাথর আসছে মইনপুর গ্রামে। ওইখানে বালু-পাথর ডা¤িপং হচ্ছে। এখান থেকে বিক্রিকৃত মাল লোড হয়ে যাচ্ছে জেলার বাইরে।
বেরীগাঁওয়ের সাজিদুর রহমান বলেন, ধোপাজান-চলতি নদীর বালু-পাথর লুট বন্ধ হলে বালু-পাথরবোঝাই বাল্কহেড, ‘পঙ্গ পাল’ আটক হয় কিভাবে। প্রায় প্রতিদিন শহর পুলিশ ফাঁড়ির ঘাটে আটক দেখা যায় এসব অবৈধ যানবাহন।
কৃষ্ণনগর গ্রামের সুজাউল হক বলেন, কিন্তু ধোপাজান-চলতি নদীর বালু-পাথর লুটপাট এখনও থামেনি। গত ৫ আগস্টের পর তিন মাসে লুট হয়েছিল প্রায় দেড়শত কোটি টাকার। ২৫ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত লুট হয়েছে অনুমান আরও ৫০ কোটি টাকার বালু-পাথর।
নারায়ণতলা এলাকার শিক্ষক শাহ আলম ইলিয়াস বলেন, বিজিবির উপস্থিতিতে ধোপাজান-চলতি নদী থেকে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এই পাথর ডলুরা এলাকা থেকে যানবাহন দিয়ে হালুয়ারঘাট হয়ে মইনপুর ডা¤িপং হচ্ছে। প্রতিদিন শত শত অবৈধ গাড়ি বেপরোয়া চলাচলের কারণে রাস্তায় মানুষ নিরাপদে চলাচল করতে পারছে না। চলতি নদীর বালু-পাথর লুটপাট দ্রুত বন্ধ হওয়া উচিত।
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. নাজমুল হক বলেন, ধোপাজান-চলতি নদীর বালু-পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে, তা আমি জানি না। তবে খোঁজ-খবর নিয়ে বিষয়টি আমি দেখছি।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ডলুরা এলাকায় পাথর উত্তোলনের বিষয়টি আমি জেনেছি। তবে বিজিবি বলছে এটা নাকি ভারত থেকে আসা পাথর। তবুও আমি খোঁজ-খবর নিয়ে দেখছি।