সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেট গিয়ে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে নাম দিয়েছিলেন শ্রীভূমি। এবার সেই নামকেই ফিরিয়ে আনা হলো। দেশভাগের পর সিলেটের তিনটি অঞ্চল করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি ও কাছাড় ভারতের আসাম রাজ্যে যুক্ত হয়েছিল। এবার সেই করিমগঞ্জ জেলার নাম বদল করতে চলেছে আসামের বিজেপি সরকার।
বাংলাভাষী এলাকা হিসাবে পরিচিত বরাক উপত্যকার তিনটি জেলার অন্যতম করিমগঞ্জ। এবার এই জেলার নাম পাল্টে দিলো বিজেপি সরকার। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানান, এই জেলার নাম পাল্টে দেওয়া হয়েছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা জানাতে করিমগঞ্জ জেলার নাম বদল করা হচ্ছে। আর এই কথা সাংবাদিক-বৈঠক করে জানিয়ে দিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
মঙ্গলবার আসামের মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আর তার পরই এক্স হ্যান্ডলে সেটা পোস্ট করেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ঘোষণা করেছেন যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সম্মান জানাতে রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন করে শ্রীভূমি করা হচ্ছে। হিমন্ত বিশ্বশর্মা এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ১০০ বছরেরও বেশি আগে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আসামের আধুনিক করিমগঞ্জ জেলাকে ‘শ্রীভূমি’ মা লক্ষ্মীর ভূমি হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। আজ আসাম মন্ত্রিসভা আমাদের জনগণের এই দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করেছে।
হিমন্ত বিশ্বশর্মা আরও বলেন, রাজ্যের দক্ষিণ প্রান্তের এই জেলার পুরোনো গৌরব পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যেই নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। আলাদা এক এক্স পোস্টে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করিমগঞ্জের নতুন নাম শ্রীভূমি এর নিজস্ব পরিচিতি গড়ে তুলবে। সেই সঙ্গে এটি জেলার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও তুলে ধরবে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানান, রাজ্য সরকার এমন আরও কিছু নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নিচ্ছে, যা অঞ্চলগুলোর ইতিহাস, সংস্কৃতি ও তাৎপর্যকে প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি বলেন, যেসব নাম ইতিহাসের সঙ্গে স¤পর্কিত নয় বা প্রচলিত অভিধানে নেই, সেগুলো পরিবর্তন করা হবে। করিমগঞ্জ নামটি অসমিয়া বা বাংলা অভিধানে পাওয়া যায় না। তবে শ্রীভূমি অভিধানে উল্লিখিত এবং অর্থপূর্ণ।
এর আগে ব্রিটিশ আমলে ১৮৭৮ সালে করিমগঞ্জকে সিলেট জেলার একটি মহকুমা হিসেবে গঠন করা হয়। করিমগঞ্জ শহর ছিল এই মহকুমার সদর দপ্তর। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় সিলেট জেলা পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) অন্তর্ভুক্ত হয়। তবে করিমগঞ্জ মহকুমার তিনটি ও অর্ধেক থানা এলাকা (রতাবাড়ী, বদরপুর, পাথারকান্দি এবং করিমগঞ্জের একটি অংশ) ভারতীয় ভূখ-ে থেকে যায়। পরে এই মহকুমাকে কাছাড় জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৮৩ সালের ১ জুলাই করিমগঞ্জকে পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে উন্নীত করা হয়। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, করিমগঞ্জ জেলার জনসংখ্যা প্রায় ১২ লাখ।