জয়ন্ত সেন ::
শাল্লায় ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে পিইডিপি ৪ এর আওতায় এডুকেশন ইন ইমার্জেন্সি খাতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার ৪৮টি বিদ্যালয়ে মেরামত ও সংস্কার কাজের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৮৯লাখ টাকা। এরমধ্যে ৩৪টি বিদ্যালয়ে ২ লাখ করে ও ১৪টি বিদ্যালয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা সংস্কারকাজের জন্য বরাদ্দ দেয় সরকার। সরেজমিনে দেখা যায়, ২০২৪ সালের বন্যায় উপজেলার কোনো বিদ্যালয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তারপরও এসব অক্ষত বিদ্যালয়গুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে বরাদ্দ আনা হয়েছে। আবার ইমার্জেন্সির এসব বরাদ্দ দিয়েছেন তার পছন্দের শিক্ষকদের। একই বিদ্যালয়ে বারবার বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বিদ্যালয়ের ইমার্জেন্সি বরাদ্দ থেকে ২ লাখ টাকা বরাদ্দে ৪০ হাজার টাকা ও দেড়লাখ টাকা বরাদ্দে ৩০হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন তিনি। লাখে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় শিক্ষা কর্মকর্তাকে। এমনই অভিযোগ খোদ শিক্ষকদের। ঘুষের টাকার ভুয়া বিল ভাউচার আগেই তৈরি করে রাখেন বলেও জানান শিক্ষকরা। উপজেলার ৪৮টি বিদ্যালয়ের সংস্কারের ৮৯লাখ টাকা ইমার্জেন্সি খাতের প্রায় ১৪লাখ টাকাই তার পকেটে গেছে বলেও জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক এমনই অভিযোগ করেছেন। শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালামের ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারছেন না। কোনো শিক্ষক লিখিত অভিযোগ করতে চাইলেই সার্ভিসবুকে ‘প্যাঁচ’ লাগিয়ে দিয়ে যাবেন বলে ভয়ভীতি দেখান শিক্ষা কর্মকর্তা। ফলে উপজেলার শিক্ষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে, শিক্ষা কর্মকর্তা ‘সালাম আতঙ্ক’। আবার তার এই দুর্নীতির সাথে যুক্ত রয়েছেন স্থানীয় কিছু অসাধু শিক্ষকও। যেকারণে শিক্ষা কর্মকর্তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী শিক্ষকরা এই সিন্ডিকেটের কাছে অনেকটাই জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
শিক্ষকদের এই অভিযোগ উঠতে না উঠতেই ২০নভেম্বর (বুধবার) উপজেলার আনন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য চন্দ্রকান্ত রায় বলেন, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল মেরামতের জন্য সরকারি বরাদ্দ আসে দেড়লাখ টাকা। এরমধ্যে সংস্কারে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৯৭ হাজার টাকা। শিক্ষা অফিসে ঘুষ দেয়া হয়েছে ৩০হাজার আর ২২হাজার টাকা সরকারি ভ্যাট। আমাকে আনন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক শিল্পী চৌধুরী এই হিসাব দিয়েছেন। আরও ৫হাজার টাকা নাকি দিতে হবে অফিসে। আমি বলেছি ঘুষ-দুর্নীতি আমি পছন্দ করি না। তিনি শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালামের কাছে ৩০হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের জবাব চাইবেন বলে জানান ওই দাতা সদস্য।
এবিষয়ে আনন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক শিল্পী চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, এবিষয়ে আমি ফোনে যেনো না মাতি স্যারে কইছইন। এটি তো সবারই জানা। আপনি শিক্ষা অফিসে গিয়ে বুঝুন।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি তাপস কুমার রায় বলেন, আমি কোনো লেনদেন করিনা। আপনি শিক্ষা অফিসারকে জিজ্ঞেস করেন।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালামের অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহনলাল দাস বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তদন্তে আপনারাও সহযোগিতা করবেন বলে জানান তিনি।