ধোপাজান-চলতি নদী ও যাদুকাটাসহ অন্যান্য বালিপাথর মহালগুলোতে বর্তমান ইজারা পদ্ধতি বাতিল করে সরকারিভাবে ক্রয়কেন্দ্র চালুর দাবি উঠেছে। গণমাধ্যমে গত বুধবার (১৩ নভেম্বর ২০২৪) এক সংবাদ প্রতিবেদনে এতদসংক্রান্ত এক সমাবেশের বক্তাদের বক্তব্যের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে যে, হাওরাঞ্চল বছরে সাত-আট মাস জলমগ্ন থাকে। এই প্রাকৃতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যুগ যুগ ধরে হাওরাঞ্চলের দরিদ্র-শ্রমজীবী বারকিশ্রমিক জনসাধারণ হাতে ব্যবহারযোগ্য বালতি ও বেলচা দিয়ে উজানের পাহাড় থেকে নেমে আসা নদীগুলোর তলদেশ থেকে বালি-পাথর আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। এই পদ্ধতিতে বারকিশ্রমিকরা যে পরিমাণ বালি-পাথর আহরণ করতো, প্রতি বছর বর্ষায় উজান থেকে প্রবাহিত জলের সঙ্গে বলতে গেলে সেই একই পরিমাণ বালি-পাথর নেমে এসে নদীর তলদেশ আগের মতোই ভরাট করে দিতো। এতে করে প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতার উটকো বিপদ আবির্ভূত হতো না একেবারেই।
কিন্তু একদা তহশিলদারের পরিবর্তে ইজারাদার নিয়োগ দেওয়ায় ইজারাদার ১০০ টাকা ইজারা মূল্যের বিপরীতে লক্ষ টাকা মুনাফা লাভের লোভে পরিবেশ বিধ্বংসী ড্রেজার-বোমাসহ বিভিন্ন নামের খননযন্ত্র দিয়ে বালি-পাথর উত্তোলন ও পাড় কেটে প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতার বিপর্যয় ডেকে এনেছে এবং বালি-পাথর মহালগুলোকে প্রাকৃতিক সম্পদ লুটের অভয়ারণ্য করে তোলেছে।
সরকারের পক্ষ থেকেই সর্বাগ্রে এর প্রতিকার করা উচিত ছিল, কিন্তু তার সম্পূর্ণ বিপরীত কা-কারখানা ঘটে চলেছে কয়েক যুগ ধরে। সোজা কথায়, দেশের রাজনীতিক সমাজ এই বালি-পাথর লুটপাটকারী সিন্ডিকেট গড়ে তোলেছে। যে-কারণে লুটপাটকারীদেরকে অদ্যাবধি কোনও প্রকার শাস্তির আওতায় আনা তো দিল্লি দূরস্থ, এমনকি এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনও প্রকার প্রতিরোধকর প্রতিকার করাও সম্ভব হয়ে উঠে নি।
আপাতত সম্পাদকীয়তে এর বেশি কীছু বলতে চাই না। কেবল বলি : প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ আমলা, আমজনতার মাথায় হাত বুলিয়ে নিজের আখের গোছানোতে মগ্ন রাজনীতিবিদ, অবৈধ পথে সম্পদ অর্জনে লিপ্ত ব্যবসায়ী, অবৈধ ব্যবসার বখরা পাওয়া সাংবাদিক কিংবা সমাজকর্মীগণ অর্থাৎ রাজনীতিক সমাজের দুর্নীতিবাজরা, আপনারা দয়া করে সতর্ক হোন, অবৈধ পথে সম্পদ অর্জনের অপতৎপরতা বন্ধ করুন। না হয় বিক্ষুব্ধ বারকিশ্রমিকসহ আমজনতার দ্রোহাগ্নির তাপে পোড়ে মরার অপেক্ষায় থাকুন। সময় সমাগত। সুতরাং সাধু সাবধান।