শহীদনূর আহমেদ ::
সুরমা নদীর উপর একটি সেতুর অভাবে সীমাহীন দুর্ভোগে সুনামগঞ্জের সদর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা নৌকা। এলাকাটি কৃষি ও পর্যটন সম্ভানায় এগিয়ে থাকলেও সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় সুরমা নদীতে সেতুর অভাবে ব্যাহত হচ্ছে জীবনযাত্রা। বিগত সরকারের আমলে সেতু নির্মাণে বারবার আশ্বাস মিললেও আলোর মুখ দেখেনি প্রতিশ্রুতির। এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে পরিবর্তনের এই বাংলাদেশে হালুয়ারঘাট-ধারারগাঁও সেতুর অপেক্ষার অবসান চান এলাকাবাসী।
জানা যায়, হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ। সদর উপজেলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদী বিভক্ত করেছে উপজেলাটিকে। নদীর উত্তরপাড়ের তিনটি ইউনিয়ন সুরমা, জাহাঙ্গীরনগর, রঙ্গারচর এবং পার্শ্ববর্তী দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ও বাংলাবাজার ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের দেড় লক্ষাধিক মানুষকে স্কুল, কলেজ, ব্যাংক, প্রশাসন ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য যেতে হয় দক্ষিণে অবস্থিত জেলা শহরে। এসব এলাকার উৎপাদিত সবজি, ধান ও বিভিন্ন ধরনের ফসল বাজারজাতের একমাত্র ক্ষেত্র জেলা সদর। উত্তরাঞ্চলে মেঘালয় পাহাড়ঘেরা থাকায় এর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে সেখানে যান জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। এছাড়াও ভারত বাংলাদেশের অন্যতম ডলুরা সীমান্ত হাটের অবস্থান নদীর উত্তরপাড়ে হওয়ায় এলাকাটির অধিক গুরুত্ব রয়েছে ব্যবসায়ী ও দশনার্থীদের কাছে। ভারত-বাংলাদেশের সমন্বয়ে ডলুরা স্থলবন্দর চালু হলে খুলে যাবে অপার সম্ভাবনার দুয়ার। তবে জেলা শহরের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের প্রধান প্রতিবন্ধকতা সুরমা নদী। হালুয়ারঘাট-ধারারগাঁও এলাকায় একটি সেতুর অভাবে বৃহৎ জনগোষ্ঠী এখনো সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। কৃষি, অর্থনীতি ও পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় সুরমার উত্তরের এই জনপদটি একটি মাত্র সেতুর অভাবে অর্থনৈতিক সূচকে পিছিয়ে রয়েছে। এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে সুরমা নদীতে একটি সেতু নির্মাণে বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন সময় দাবি উঠে আসলেও তা উপেক্ষিত রয়েছে। তাই পরিবর্তনের বাংলাদেশে এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নের জন্য সুরমা নদীর উপর সেতু বাস্তবায়নের দাবি এলাকাবাসীর।
সুরমা উত্তরপাড়ের বাসিন্দা রুশন আলী। বয়স ৮০ কোঠায় পা দিয়েছে। জীবদ্দশায় সেতু নির্মাণ দেখে যাওয়ার আশা জানিয়ে বলেন, অনেক বছর ধরে অপেক্ষা করছি একটি সেতুর জন্য। বিগত সরকারের আমলে এমপিরা অনেকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেতু নির্মাণ করে দিবেন। কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি। আর কয়দিন বাঁচবো। বেঁচে থাকা অবস্থায় সেতু দেখে যেতে পারবো কি-না জানিনা। দেশে নতুন সরকার আসছে। আমাদের এলাকার বঞ্চিত মানুষদের জন্য সরকার যদি সেতুটি নির্মাণ করে দেয় তাহলে বড় উপকার হয়।
কাছার ষোলঘর গ্রামের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, আমাদের দুর্ভোগ কবে শেষ হবে জানি না। উত্তরপাড়ের মানুষেরা যুগের পর যুগ ধরে একটি সেতুর জন্য কষ্ট করছে। সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম পায় না। ছেলেমেয়েদের স্কুল কলেজে যেতে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। হাসপাতালে রোগী নিয়ে যেতে গেলেও নদী পারাপারে বিপাকে পড়তে হয়। মানুষ বড় কষ্টে আছে।
স্থানীয় উন্নয়নকর্মী আবুল হায়াত বলেন, উত্তরপাড়ের লক্ষাধিক মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি হালুয়ারঘাট-ধারাগাঁও সেতু। সেতুর অভাবে বৃহৎ সংখ্যক মানুষ পিছিয়ে রয়েছেন। আমরা চাই সেতুর জন্য অপেক্ষার অবসান। আগামীতে যাঁরা ক্ষমতায় আসবে তাঁরা দ্রুত গতিতে এই সেতুর কাজ বাস্তবায়ন করবেন এমনটাই প্রত্যাশা।
দেশের ৩৭টি সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে হালুয়ারঘাট-ধারাগাঁও সেতু অনুমোদন প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির নির্র্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে আমাদের কাছে বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হয়েছে। আমরা সেগুলো ঢাকায় পাঠিয়েছি। সেতুর নির্মাণে একটি প্রকল্পগ্রহণ করার কথা রয়েছে। আশা করছি আগামীতে সেটির অনুমোদন হবে।