সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, বড় ধরনের গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ছাড়া এ মুহূর্তে ভোলা কেন, বাংলাদেশের কোথাও আবাসিক খাতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া সম্ভব না।
শুক্রবার ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের মালেরহাট এলাকায় ইলিশা-১ গ্যাসক্ষেত্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৫টিসহ ২০২৮ সালের মধ্যে ভোলায় আরও ১৯টি গ্যাসকূপ খনন করা হবে। তখন বড় মজুতের কূপ আবিষ্কার হলে ভোলার মানুষের দাবির বাস্তবায়ন হবে বলে উপদেষ্টা আশ্বাস প্রদান করেন।
শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ স¤পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ভোলায় যান। পরে দিনব্যাপী বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কো¤পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) আবিষ্কৃত ভোলা নর্থ-১, নর্থ-২, ইলিশা-১, শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র, বোরহানউদ্দিন উপজেলায় অবস্থিত ২২০ মেগাওয়াট, নতুন বিদ্যুৎ বাংলাদেশ লিমিটেড ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ২২৫ মেগাওয়াট, কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, ভোলার বাংলাবাজারে অবস্থিত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও প্রস্তাবিত ভোলা নর্থ প্রসেস প্ল্যান্ট এলাকা পরিদর্শন করেন।
বোরহানউদ্দিন শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রে তিনি মতবিনিময় সভা করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ স¤পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা মমতাজ, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার প্রমুখ।
ইলিশা-১ গ্যাসক্ষেত্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, আবাসিক খাতে বাসাবাড়িতে ও শিল্প, কলকারখানায় বাণিজ্যিক খাতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়ার প্রচলন আছে। বাণিজ্যিক খাতে গ্যাস-সংযোগ বন্ধ নেই। ভোলায় এটা চাইলেই পেট্রোবাংলার সুন্দরবন গ্যাস কো¤পানি লিমিটেড গ্যাস-সংযোগ দিতে বাধ্য। কিন্তু আবাসিক খাতে গ্যাস-সংযোগ নিয়ে আমরা বিরাট সমস্যায় আছি। ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে আবাসিক খাতে যে গ্যাস-সংযোগ আছে, আমাদের যে বিডা (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ), বেজা (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ) রয়েছে, যেসব অর্থনৈতিক অঞ্চল, রপ্তানিমুখী অঞ্চল রয়েছে, তাদের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলাপ করেছি, সব জায়গাতে অনেকেই বলছে, আবাসিক খাতে নতুন করে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া যাবে না। যাদের সংযোগ আছে, তাদের সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, বাসাবাড়িতে গ্যাসের ব্যবহার, এটা অর্থনৈতিকভাবে খুব একটা লাভজনক না। আসলে আমাদের গ্যাসস¤পদ খুব সীমিত স¤পদের একটি। এ সীমিত স¤পদ সবচেয়ে ভ্যালু এডিশন স্তরে ব্যবহার করতে হয়। এ কারণে সারা দেশে আবাসিক খাতে কোনো গ্যাস-সংযোগ দিচ্ছি না। গ্যাস বাংলাদেশের অনেক জেলায় আবিষ্কৃত হয়েছে। আর কাউকেই দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, আবাসিকে বাড়ি বাড়ি গ্যাস-সংযোগ দেওয়া অনেক ব্যয়বহুল। আবার যখন ভোলায় প্রচুর পরিমাণে শিল্প-ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে, তখন বাসাবাড়িতে ঠিকমতো গ্যাস পাওয়া যাবে না। তাহলে সংযোগ দিয়ে লাভ কী?
ভোলার গ্যাস ভোলাবাসী কেন পাবে না, এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, বাসাবাড়িতে গ্যাস-সংযোগের ভ্যালু এডিশন এত কম, প্রথমত এটা জাতীয় সিদ্ধান্ত। বাসাবাড়িতে যদি গ্যাস-সংযোগ দেওয়া শুরু হয়, তাহলে সারা দেশে সংযোগ দিতে হবে। একদিকে বছরে ১০৫টি জাহাজে ৬ হাজার কোটি টাকার এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) আমদানি হচ্ছে, আবার ঢাকার শিল্প-ইন্ডাস্ট্রি ঠিকমতো গ্যাস পাচ্ছে না। এ অবস্থায় জাতীয় পর্যায় থেকেই আবাসিক খাতে গ্যাস-সংযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন গ্যাসের যে পরিস্থিতি, এ সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আমরা কেন, কোনো সরকারের পক্ষেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা সম্ভব না। আবাসিকে গ্যাস-সংযোগ দিতে পারবে না। এখন যদি আগামী দিনে ভোলায় যদি বড় ধরনের কোনো গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া যায়, তাহলে অন্য কথা।
উপদেষ্টা আরও বলেন, বাপেক্স ২০২৪ সালে আরও ৫টি গ্যাসকূপ খননে হাত দেবে। ২০২৮ সালের মধ্যে ওই ৫টিসহ ১৯টি গ্যাস কূপ খনন করবে। ভোলার গ্যাস ভোলায় রাখতে হলে ভোলায় বেশি বেশি করে শিল্পকারখানা নির্মাণ করতে হবে। আমরা সেটাই করার চিন্তা করছি। বিডা ও বেজার চেয়ারম্যানকে ভোলা দেখে যেতে বলব, যাতে একটি শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা যায়। সেটাই হবে ভোলাবাসীর জন্য মঙ্গলজনক। তাহলে ভোলার লোকজনসহ দক্ষিণাঞ্চলের লোকজন চাকরি পাবে, উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অর্থনৈতিকভাবে কাজকর্ম বেড়ে যাবে।