অচিরেই ভোট বটে, কিন্তু ভোটে ‘নির্বাচিত প্রভু’ চাই না। বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘জনগণ নির্বাচনের জন্য অনন্তকাল অপেক্ষা করবে না’। গণমাধ্যমান্তরে খবর বেরিয়েছে। খুবই সঙ্গত কথা। অচিরেই একটা নির্বাচন হওয়া দরকার। কিন্তু মনে রাখতে হবে, দেশের মানুষ তাড়াতাড়ি নির্বাচন চান বটে, তবে অতীতে যেমন ধরণের নির্বাচন হয়েছে তেমন ধরণের নির্বাচন চান না। অতীতের নির্বাচনগুলো রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের ক্ষমতায়নকে নিশ্চিত করতে পারেনি। জনগণের মতো আমরাও মনে করি যথাসম্ভব কম সময়ের মধ্যে নির্বাচন হওয়া দরকার, কিন্তু সে-নির্বাচনকে অবশ্যই জনগণের ঊর্ধ্বে কোনও বিশেষ রাজনীতিক দল ও শ্রেণিবিশেষের ক্ষমতায়নের উপায় হলে চলবে না, যে-ক্ষমতা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে উঠে জনগণকে পায়ের তলায় নির্মমভাবে পিষ্ট করে কেবল, অন্যদিকে প্রতিনিধির সম্পদের বহর বাড়ায় ও জনগণের জবানকে সংযত হতে বলে প্রকারান্তরে বাকস্বাধীনতাটাকে হরণ করে। তাই এবারের নির্বাচনের আগে জনদাবি হলো, আগের মতো নির্বাচনকে দমন ও সম্মতি উৎপাদনের হাতিয়ার হলে চলবে না। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রসংস্কারের প্রশ্ন উঠেছে। প্রকৃতপ্রস্তাবে অর্থনীতিকে বদল না করে রাষ্ট্রসংস্কারের বাস্তবতা নিতান্তই অবান্তর। রাষ্ট্র সংস্কারের আগে আপাতত নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন চাওয়াটাই অধিক উত্তম, আমরা তাই চাই। এটা এই দেশের জন্যে জরুরি, জরুরি প্রচলিত রাজনীতিকে দুর্নীতিগ্রস্ততা থেকে মুক্ত করার জন্যে। যদি জনপ্রতিনিধিকে নির্বাচনোত্তর সময়ে জনগণের কাছে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে না আসা যায় তবে কোনও নির্বাচনের দরকার নেই। জনগণ ভোট দিয়ে কারও দাপটের শিকার হতে চান না, তাঁদের কোনও ‘নির্বাচিত প্রভুর’ দরকার নেই। এর চেয়ে সেটাই ভালো, ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতিতে দেশ চলবে, যেমন চলছে।
গয়েশ^র চন্দ্র রায় তড়িঘড়ি নির্বাচন চান, জনগণও নির্বাচনের মুখ চেয়ে অনন্তকাল বসে থাকতে চান না। কিন্তু এবারের নির্বাচনের পূর্বশর্ত হলো, নির্বাচকদের কাছে জনপ্রতিনিধির জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের বিষয়টিকে পরিহার করা চলবে না। পরিহার করলে ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলকদের অভ্যুত্থান’-এর মতো পরিণতির জন্য তৈরি থাকতে হবে। এমনটা হোক জনগণ চান না, তাঁরা বার বার ‘কাউয়ায় ধান খাইল রে, খেদাইবার মানুষ নাই’ এই কথার বিপরীতে গিয়ে কাউয়া খেদানোর যজ্ঞ করতে চান না।