সুনামগঞ্জের সুরমার উত্তরপাড়ে বালু-পাথর লুটের বিষয়ে গণমাধ্যমে বিস্তর লেখালেখি হয়, হচ্ছে এবং বোধ করি আরও হবে। কেন না এই বালু অথবা পাথর লুটের সমাজবাস্তবতাটি ততোক্ষণ পর্যন্ত চলবে যতক্ষণ পর্যন্ত সমস্বার্থসম্পন্ন সমাজ অধিপতিরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে রাজনৈতিক মোর্চা গঠন করে রাষ্ট্রক্ষমতাকে নিজেদের শ্রেণি স্বার্থরক্ষার্থে ব্যবহার করতে পারবেন।
সুরমার উত্তরপাড়ে বালু লুটের ব্যাপারে সে-শ্রেণিস্বার্থ যে পুরোমাত্রায় রক্ষিত হচ্ছে তার প্রমাণ মেলে গতকাল (শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪) দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদনের ছত্রে ছত্রে। প্রতিবেদনটির শিরোনাম করা হয়েছে, ‘সুনামগঞ্জের চলতি নদে ৫ আগস্টের পর ১০০ কোটি টাকার বালু লুট’।
সুনামগঞ্জ শহরে অবস্থিত প্রশাসনের কার্যালয় হতে বড়জোর এক কিলোমিটার দূরে নদীর উত্তরপাড়ে সদরগড়ে ঘটছে এই লুটপাটের মহাযজ্ঞ। নিতান্ত সংক্ষিপ্ত এই সম্পাদকীয়তে লুটপাটের এই মহাযজ্ঞের বিস্তারিত বিবরণ পেশ করার কোনও অবকাশ নেই। বিস্তারিত বিবরণ পেতে হলে প্রথম আলোর প্রতিবেদনটি পড়ে নিলেই হবে। সেখানে প্রশাসন কী করতে পারতেন আর প্রশাসন প্রকৃতপ্রস্তাবে কী করছেন তার বিবরণ আছে। প্রশাসনের কোনও প্রতিরোধ মানছে না বালু লুটেরা, কিন্তু প্রতিরোধ ভেঙে লুটপাটের প্রতিকার করার কোনও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। প্রশাসন দুয়েকটি বাঁশ দিয়ে নদীতে বেড়া দিচ্ছেন ও পাহারাদার দিচ্ছেন কয়েকজন, অপরদিকে লুটেরারা আসছে একযোগে শত শত বাল্কহেড, স্টিলবডি, বারকি নিয়ে সংখ্যায় কয়েক সহ¯্রাধিক এবং এইভাবে অসহায়ত্বের অজুহাত তৈরি হচ্ছে। সকল কাজের সম্মিলিত পরিণতি শেষ পর্যন্ত বালু লুটপাটের সম্মতিতে পর্যবসিত হচ্ছে। সম্মতি এজন্যে যে, এই লুটপাটের কোনও প্রতিকার করা কখনও হয় নি এবং কখনও হবে না, যদি বর্তমান আর্থসামাজিক ব্যবস্থা বদলে না যায় বা বদলে দেওয়া না হয়। ‘অপেন সিক্রেট’-এর মতো একটি সত্য এই যে, অধিপতিজনদের নিয়ে সংগঠিত একটি সিন্ডিকেট উক্ত বালু লুটপাটের সঙ্গে জড়িত। কর্মস্থল তাদের পৃথক হলের সমস্বার্থে তারা একজোট হয়ে কাজ করেন। কেউ রাজনীতিক সমাজের সদস্য, কেউ জনসমাজের সদস্য।
অর্থাৎ চলতি নদের বালু লুটপাটের ঘটনায় সমাজের অধিপতি শ্রেণি রাজনীতিক সমাজের ক্ষমতাকে ব্যবহার করছে এবং প্রকারান্তরে বালু লুটপাটের স্বার্থে নিরঙ্কুশ আধিপত্য ধরে রাখতে সক্ষম হচ্ছে অনায়াসে, বছরের পর বছর। এই আধিপত্যের বিপরীতে নি¤œবর্গের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত না হলে এই বালু লুটপাটের ঘটনা থামবে না। আসলে বালু লুটপাটের ঘটনা বন্ধ করতে হলে লুটেরাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনের মতো একটি আন্দোলন আবির্ভূত ও আরোপিত হতে হবে। অভিজ্ঞমহলের ধারণা যে, সে-আন্দোলনের কোনও বিকল্প নেই, কখন হবে তারা তা জানেন না। তবে যে-কোনও সমস্যা সমাধানের সূত্র বলে কথিত এই কথা জনেন যে, ‘তোমাকে বধিবে যে, গোকূলে বাড়িছে সে’।