সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণ ইস্যুকে সামনে এনে একটি গোষ্ঠী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছে বলে ধারণা করছে বিএনপি। নেতারা মনে করছেন, এই ইস্যুতে তাদের লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হতে পারে। দেশি-বিদেশি একটি গোষ্ঠী ফায়দা লুটবে। এতে জাতীয় নির্বাচন প্রলম্বিত হতে পারে। তেমনটা ঘটলে এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হবে বিএনপি। বড় দল হিসেবে দীর্ঘ খেসারত দিতে হবে তাদেরকে। নির্বাচন ও নিকট ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিএনপি রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে সাংবিধানিক পথেই থাকতে আগ্রহী। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
মঙ্গলবার যখন রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যুতে সরগরম বঙ্গভবন, তখন জরুরি বৈঠকে বসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। সূত্র বলছে, সেখানে স্কাইপে যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে নেতারা বিভিন্ন মত দিলেও অসাংবিধানিক কোনো পথে রাষ্ট্রপতির অপসারণ চায় না বলে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। যদিও বৈঠকে রাষ্ট্রপতির নানা নেতিবাচক ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন নেতারা। সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে পতিত প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের মীমাংসিত ইস্যুটি সামনে আনায় রাষ্ট্রপতির মতলব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কেউ কেউ। নতুন এই ইস্যু সামনে আনার পেছনে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলার দুরভিসন্ধি রয়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতারা।
বিদ্যমান সরকার কোনো সমস্যায় পড়লে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বেশি; বুধবার রাতেই বৈঠক এ ব্যাপারে আলোচনা করেছেন নীতিনির্ধারকরা। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখানে সাংবিধানিক কিছু বিষয় জড়িত। আমরা এই মুহূর্তে চাই না পরিস্থিতি ঘোলাটে হোক। অপশক্তির রাজনৈতিক অপসারণ চাই; কিন্তু রাষ্ট্রপতির অসাংবিধানিক অপসারণ চাই না। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক পদ বা একটা প্রতিষ্ঠান, সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ। এই পদে হঠাৎ করে পদত্যাগের মাধ্যমে শূন্যতা সৃষ্টি হলে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে, রাষ্ট্রীয় সংকটের সৃষ্টি হবে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আমাদের মূল ফোকাস নির্বাচন। আমরা এজন্যই প্রথম থেকেই সরকারকে দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের পথে হাঁটার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। কেননা নির্বাচন যত দেরী হবে ততই অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। তাদেরকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।
রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যুতে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতারা প্রথমে সরব থাকলেও বুধবার বিকাল থেকে এ নিয়ে মুখ খুলতে চাচ্ছেন না। তাদের ভাষ্য-দলের হাইকমান্ড পরিস্থিতি বুঝে কৌশলী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। রাষ্ট্রপতির বিষয়টি খুবই সংবেদনশীল। হুট করে বক্তব্য দিলে দলের মধ্যে পরস্পরবিরোধী হয়ে যেতে পারে। এখানে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক উভয় দিকই জড়িত। এখন দেশের চলমান পরিস্থিতিতে কোনটি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে তা শীর্ষ নেতারা ঠিক করবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির ঢাকা মহানগরের এক নেতা জানান, তাদের কিছু কর্মী রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবিতে মঙ্গলবার বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভে যোগ দেয়। অঙ্গসংগঠনের কিছু নেতাকর্মীও সেখানে ছিল। তবে বুধবার দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে বিক্ষোভে যেতে বারণ করা হয়েছে। বিএনপি বিষয়টির সাংবিধানিক আলোচনায় গুরুত্ব দিতে চায়। রাজনীতির অংশকে দূরে রাখতে চায় বলে মনে হচ্ছে।
বুধবার সকালে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু মন্তব্য করেছেন যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন এবং ষড়যন্ত্রকারীদের সাহস জুগিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি ইতিমধ্যে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানকে অপমান করেছেন। তার অপসারণ জরুরি।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতির অপসারণ চাই না, বিষয়টা ঠিক এমন নয়। এই ইস্যুতে দলের শীর্ষ নেতারা ভাবছেন, সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আমাদের মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
এদিকে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক বলেন, যিনি গণআন্দোলনে পালিয়ে যান তার পদত্যাগপত্রের ইস্যুটি অর্থহীন। আমরা কোনোভাবে চাই না এই ইস্যু কাজে লাগিয়ে ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসন হোক, সরকার বেকায়দায় পড়–ক। মোদ্দাকথা দেশকে অস্থিতিশীল করতে দেওয়া যাবে না। - সময়ের আলো