
বিভিন্ন ঘটনায় প্রতিপন্ন হচ্চে যে, সুরমার উত্তপাড়ের ধোপাজান-চলতি নদী বালুপাথর মহালে নিরবচ্ছিন্ন গতিতে বালুপাথর লুট হচ্ছে। এই লুটতরাজ বন্ধের দাবি নতুন কোনও দাবি নয়, দশক তিনেকেরও বেশি কাল আগে থেকেই এই দাবি উত্থাপিত হয়ে আসছে। বিশেষজ্ঞ মহলের কেউ কেউ মনে করেন এই লুটতরাজের সঙ্গে অসাধু আমলা, বিভিন্ন রাজনীতিক দলের কিছু প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও সমাজের অধিপতি শ্রেণির চাঁইরা নেপথ্যের কারিগর হিসেবে কাজ করেন এবং নিয়মিত বখরা পেয়ে থাকেন। কারণ এইসব বিশেষ বিশেষ শ্রেণির চাঁই বিশেষরা লুটতরাজের সিন্ডিকেট গড়ে তোলে লুটতরাজ করেন, তার প্রভূত প্রমাণ হাজির করা গেলেও তাদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ ও প্রতিকার করা হয়েছে এমন কোনও নজির হাজির করা যায় না।
আমাদের দেশ একটা পুঁজিবাদী দেশ। যে-কোনও পুঁজিবাদী দেশে উদ্বৃত্তশ্রম শোষণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সমাজের সম্পদশালী অধিপতি শ্রেণি রাজনীতি করে থাকে এবং সমাজে অধিপতি শ্রেণির আধিপত্য জায়মান রাখা অর্থাৎ আধিপত্যের উৎপাদন ও পুনরোৎপাদন সচল রাখার জন্যে সমস্বার্থের সামাজিক শক্তিসমূহের ঐক্য গড়ে তোলে। প-িতেরা সমাজপতিদের এই কার্যকলাপকে ‘ঐতিহাসিক মোর্চা’ বলে অভিহিত করেন। অর্থাৎ দেশের যে-কোনও আর্থনীতিক কর্মকা-ের ক্ষেত্রে (হতে পারে তা কৃষি, শিল্প, গণমাধ্যম, ভূপ্রাকৃতিক সম্পদ, বিদ্যুৎ ইত্যাদি। অর্থাৎ সামগ্রিক অর্থে সংস্কৃতিসহ উৎপাদনের যে-কোনও ক্ষেত্র) ধরে নেওয়া হয় সমাজের অধিপতিদের মূর্তনির্দিষ্ট আর্থনীতিক স্বার্থ আছে, যে-স্বার্থোদ্ধারের সাপেক্ষে দেশের রাজনীতি প্রতিনিয়ত সক্রিয় থাকে। সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী অভ্যুত্থানে তাদের অংশগ্রহণের বৈচিত্রিকতার পরিসরে তাদের নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব মূর্ত হতে দেখা গেছে ও যাচ্ছে। দেশের বালু-পাথর মহালগুলোও এই আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতির আওতামুক্ত নয়। অর্থাৎ ধোপাজান-চলতি বালুপাথর মহাল ব্যতিক্রম হিসেবে সমাজপতিদের আধিপত্য বিস্তারের কর্মকা-বহির্ভূত কোনও ক্ষেত্র নয়। তার প্রতিফলন হিসেবে মহালগুলোতে অদ্যাবধি অবৈধ উপায়ে বালুপাথর উত্তোলনের প্রক্রিয়া বহাল আছে, শত প্রতিবাদ-প্রতিরোধের মুখে, কখনওই বন্ধ হয়ে যায় নি। তাছাড়া এতে করে সুরমার উত্তরপাড়ের এলাকা উত্তরোত্তর প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারাচ্ছে এবং বারকিশ্রমিকরা বেকার হয়ে গিয়ে পরিজনসহ উদ্বাস্তু হতে বাধ্য হচ্ছেন। রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিনিধিরা এই দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না, কোনওভাবেই বা কোনও যুক্তিতেই। আমাদের একটাই দাবি : বালুপাথর মহালগুলোতে ঐতিহাসিক মোর্চা অর্থাৎ বালুপাথরখেকো সিন্ডিকেটের আধিপত্য প্রতিরোধ করুন, ড্রেজার-বোমা মেশিন দিয়ে বালুপাথর উত্তোলন বন্ধ হোক এবং সনাতন পদ্ধতির বালতি-বেলচা-ঝুড়ি সহযোগে বালুপাথর আহরণের পদ্ধতি আবার ফিরিয়ে আনা হোক। এতে করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধার হওয়ার সঙ্গে ব্যাপক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে, হাজার হাজার মানুষের কষ্টের দামে কয়েকজন ধনকুবেরের ঘরে সুখ বিলাসিতা হয়ে দেখা দেবে না।