
জাতিসংঘের বৈশ্বিক বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক, ২০২৪-এর প্রতিবেদন বলছে, ‘বাংলাদেশে ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে অতি মানবেতর জীবনযাপন করছেন ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।’ অথচ গত কদিন আগেও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনপর্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হয়ে গিয়ে একটি ‘স্মার্ট’ দেশে পরিণত হওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। অন্তত প্রচারমাধ্যমে এইরূপ তথ্যই সম্প্রচারিত হয়েছে। এখন জাতিসংঘের তথ্যানুসারে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এই মাস দুয়েকের কালব্যবধানের গুণে দেশটা রাতারাতি বদলে গিয়ে উন্নয়নশীল দেশ থেকে গরিব দেশে পর্যবসিত হয়ে পড়েছে। অবাক না হয়ে পারা যায় না।
আমরা সত্যি সত্যি অবাক হয়েছি, বিশ্বাস করুন। এবং ভাবছি, এমন তো হওয়ার কথা নয়, কীছুতেই হতে পারে না। তাই ভেবে নিয়েছি, তখন সত্য গোপন করা হয়েছে, প্রকৃত তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশের মানুষকে প্রতারণা করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দুর্বৃত্তায়িত লুটেরা শ্রেণি দেশের সাধারণ মানুষকে এভাবেই তথ্যের ধূ¤্রজালে জড়িয়ে ধোঁকা দিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করে।
পরিস্থিতি এখন পাল্টে গেছে। ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানোত্তর কালে এখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুসারে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না যে, বিগত দেড় দশকে আখের রস নিংড়ে ছুবড়া বানানোর মতো দেশকে আর্থনীতিকভাবে নিংড়ে নিয়ে ক্রমাগত ছুবড়া বানানো হয়েছে। কীছু মানুষকে ধনী বানানোর জন্যে দেশের সব মানুষকে নির্মমভাবে শোষণ করা হয়েছে এবং দেশের মুষ্ঠিমেয় ধনকুবেরের বিত্ত লক্ষকোটিগুণ বেড়েছে, দেশে বিদেশে তাদের বাড়ি-গাড়ি ও বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হয়েছে, ব্যাংক ব্যালেন্স বেড়ে পাহাড়প্রতিম হয়ে উঠেছে।
ইতিহাস বলছে, ব্রিটিশ আমলে ইংরেজরা, পাকিস্তানি আমলে পশ্চিম পাকিস্তানিরা সম্পদ পাচার করেছে এবং বাংলাদেশ আমলে বাংলাদেশি ধনকুবেররা একই কা- করেছে। কেউ কেউ বলেন পুঁজিবাদী অর্থনীতির এই তেলেসমাতি বন্ধ হবার নয়।
পুঁজিবাদ এমনই, ধনসঞ্চয়ের নীতি তার একমাত্র আরধ্য। সুতরাং ধনীরা বিদেশে দেশের সম্পদ পাচার করে, তারা নিজেদের চেতনায় দেশকে বিদেশ এবং বিদেশকে স্বদেশ করে তুলছে এবং তোলবেই। এখন ‘উপায় নেই গোলাম হোসেন’ অবস্থা। তাই এইসব দেশদ্রোহীদের প্রতিরোধ করাসহ তাদের বিচার করার উপায় দেশের মানুষকে খোঁজে বের করতে হবে। ১৭ কোটি মানুষের সম্পদ ‘কমবেশি তিন সতেরো ৫১’ জন আত্মসাৎ করে বিদেশে পালিয়ে গিয়ে বিলাসী জীবন কাটাবে এটা হতে পারে না। আর যেনো এমন না হয়। তাই সর্বাগ্রে রাষ্ট্র পরিচালানায় জনগণের ক্ষতায়নকে নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে কীছুই হবে না। বর্তমান বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিসরে এমন রাজনীতিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের কোনও বিকল্প নেই।
এই চিন্তায় দেশের সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ হতে হবে ও কাজে নামতে হবে। এইভাবেই বিষয়টাকে বলছি, এমনভাবেই বলতে হবে। এর বেশি মূর্তনির্দিষ্টভাবে বলার সুযোগ আপাতত নেই।