
স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মতিন। ষোলঘর পয়েন্টের বাজারে লাউ বাছাই করতে করতে বিক্রেতার কাছে দাম জানতে চাইলেন। বিক্রেতার কাছ থেকে প্রতি পিসের দাম ৯০ টাকা শুনেই ঝুড়িতে রেখে দিলেন তিনি। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ৬০ টাকার লাউ ৯০ টাকা! খাইলাম না লাউ।
কথা হলে তিনি বলেন, সবজির দাম এতো হবে কখনো আমরা ভাবিনি। সবকিছুর দামেই এখন আগুন। ব্যয় বাড়লেও, আয় তো বাড়ে না। একটা কিনলে, আরেকটা কিনার টাকা থাকে না। এমন হলে কেমনে চলবো?
অটোরিকসা চালক রুহুল আমিন বলেন, সারাদিন অটো চালিয়ে যে টাকা আয় হয়, তা একদিনেই শেষ হয়ে যায়। বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। এখন আর সঞ্চয় করার মতো কিছু হাতে থাকে না। আমাদের কষ্ট কেউ দেখে না।
বাজার খরচের অসহনীয় চাপে এভাবেই কষ্টে আছেন মতিন ও রুহুলের মতো ভোক্তারা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়া, তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন কঠিন করে তুলেছে। তারা জানান, নি¤œ ও মধ্যবিত্তরা, যেসব নিত্যপণ্যের ওপর নির্ভর করেনÑ গত এক বছরে সেসব পণ্যের পেছনে যেভাবে ব্যয় বেড়েছে, তাতে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। কোনটা বাদ দিয়ে, কোনটা কম খেয়ে চলছে এখন সাধারণ মানুষের সংসার। অর্থাৎ প্রয়োজন হলেও কোন পণ্যটি বাদ দিয়ে সংসার চালানো যায়, এমন চিন্তা পেয়ে বসেছে মানুষকে।
গত এক বছরে মাঝারি ও মোটা চাল থেকে শুরু করে অ্যাঙ্কর ডাল, খোলা তেল, পেঁয়াজসহ প্রায় সব পণ্যের পেছনে খরচ বেড়েছে। অথচ বাজারে পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। হাতের কাছে রয়েছে সব কিছু, কিন্তু পকেটের নাগালের বাইরে রয়েছে বেশির ভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য।
এদিকে, প্রতিদিনের রান্নায় দরকারি পণ্য পেঁয়াজের কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা কিনে খেতে হচ্ছে। গত বছর অক্টোবরে যা ছিল ৮৫ টাকা। এক সময়ের সস্তা পণ্য হিসাবে পরিচিত আলু এখন দামি পণ্যে পরিণত হয়েছে। গত বছর ৪২ টাকায় এক কেজি আলু কেনা গেছে। এখন তা ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়লে সবজির ওপর নির্ভরতা বাড়ে নি¤œ আয়ের মানুষের। অথচ সবজি কিনতেও এখন পকেট পুড়ছে। বাজারে বেশির ভাগ সবজি ১০০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে কেনা গেছে। সস্তা পেঁপের কেজি এখন ৫০ টাকা হয়েছে। বেগুন, করলা, বরবটি, ধুন্দল, ঝিঙে ও চিচিঙ্গা, টমেটো, কাঁকরোল, মুলা, লাউ, চালকুমড়া, কপি, টমেটো- এসব পণ্য এখন নি¤œবিত্তরা এড়িয়ে চলছেন। মধ্যবিত্তদেরও হিসাব করে কিনতে হচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো পণ্যের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিলে তার সুযোগ নিয়ে অতিরিক্ত দাম বাড়িয়ে দেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। যেমনটা সম্প্রতি ডিমের ক্ষেত্রে দেখেছি। সুযোগ পেলেই সংকট তৈরি করা হয় এবং যে যেভাবে পারে দাম বাড়ায়। তারা বলেন, আমাদের আইন আছে, প্রয়োগ নেই। বাজার কারসাজিতে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সরকারকে এ বিষয়ে কঠোর মনিটরিং এবং বাজারে পণ্যের যোগান নিশ্চিত করতে হবে।