সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ৩য় দফার সংলাপ চলছে। তবে এবারের সংলাপে জাতীয় পার্টিকে (জাপা) এখনও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। প্রথম দফার সংলাপে দলটিকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও এবার তাদের ডাকা হয়নি সংলাপে। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে জাপাকে নিয়ে আপত্তি জানানো হয়, দলটিকে আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে অভিহিত করে সমালোচনা করা হয়।
অপরদিকে জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের পক্ষ থেকে জাপাকে নিয়ে আপত্তি এসেছে। অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ ইতোমধ্যে জাপাকে নিয়ে কঠোর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হাসনাত বলেন, ‘স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হলে, আমরা সেই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও কঠোর বিরোধিতা করব।’ অপরদিকে সারজিস প্রশ্ন রেখেছেন, ‘জাতীয় পার্টির মতো মেরুদ-হীন ফ্যাসিস্টের দালালদের প্রধান উপদেষ্টা কীভাবে আলোচনায় ডাকে?’
তবে জাপাকে সংলাপে ডাকা হবে কী না সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু মনে করেন, সংলাপে ডাকা না ডাকা, সরকারের বিষয়। তারা নিজেদের মতো করে রাজনৈতিক কর্মকা- চালিয়ে যাবেন। দুই সমন্বয়কের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, কেউ যদি এমন কথা বলতে চায়, তাহলে বলতেই পারে। কিন্তু মাঠে এভাবে বলে লাভ নেই। আমাদের জিজ্ঞেস করলে আমরা আমাদের মতো করে উত্তর দিব। এটার পক্ষে-বিপক্ষে দুইটাতেই যুক্তি আছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই জাতীয় পার্টি সক্রিয়ভাবে আন্দোলনরত ছাত্রদের পক্ষে ছিল বলে জানিয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়ার কারণে আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে রংপুরে মামলা হয়েছে পার্টির পদ পদবি উল্লেখ করে। আমাদের নেতা-কর্মীরা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়ার কারণে গ্রেপ্তার হয়ে হাজতবাস করেছে। আন্দোলনের শুরু থেকে, আমাদের পার্টি চেয়ারম্যান এর পক্ষে কথা বলেছেন। গত ৩ জুলাই সংসদে তখনকার প্রধানমন্ত্রীর সামনে ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে তিনি বক্তৃতা করেছেন।
সংস্কার, নির্বাচন ও চলমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় সংলাপ করছেন। গত শনিবার প্রথম দিনের সংলাপে অংশ নেয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণ অধিকার পরিষদসহ পাঁচটি দল এবং গণতন্ত্র মঞ্চসহ তিনটি জোট।
এদিকে সংলাপে ডাক পাওয়া না পাওয়া ঘিরে রাজনীতিতে দলটির টিকে থাকা নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, জাপা দেশের বড় ৪টি দলের মধ্যে একটি। ফলে তারা রাজনীতি থেকে একদম হারিয়ে যাবে এমন টা মনে করা যুক্তিযুক্ত নয়। তবে এটা তাদের নতুন পরীক্ষায় ফেলবে। এখন অপেক্ষা করতে হবে দলটির পক্ষ থেকে কী রিঅ্যাকশন আসে। মনে রাখতে হবে রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। তাছাড়া প্রতিষ্ঠার পর থেকে তারা নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।
এদিকে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের গণমাধ্যমকে জানান, আওয়ামী লীগ সবশেষ নির্বাচনে তাকে জোর করে নির্বাচনে নিয়ে যেতে বাধ্য করে। এরপর সংসদে গিয়ে তিনি ও দলটির নেতারা সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র বক্তব্য রেখেছিলেন। তখন বিএনপি ও অন্য দলগুলো নীরব ছিল। তাছাড়া জুলাই আগস্ট বিপ্লবে জাপার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। রংপুরে ছাত্র জনতার আন্দোলনে সবচেয়ে বড় অবস্থান ছিল জাপার নেতাকর্মীদের। হামলায় আহত নিহত ও গ্রেপ্তারের তালিকায় জাপার নেতাকর্মীরা ছিল। সুতরাং জাপাকে সেটুকু সম্মান ও মূল্যায়ন করা উচিত।
রাজনীতিতে জাপার ভবিষ্যৎ কী এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পরিবর্তনকে কাজে লাগাবে জাপা। দলটির শক্তি ও দুর্বলতার জায়গা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তিনি নিজেও তৃণমূলে যাচ্ছেন এবং যাবেন। তিনি যেখানেই যাচ্ছেন মানুষের সমর্থন পাচ্ছেন। মানুষ জাপাকে পছন্দ করে। ফলে নানা ষড়যন্ত্র ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে দলটির শক্ত অবস্থান গড়ে উঠেছে।