সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
নির্বাচনি ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছে ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো। ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য একটি ইস্যুতে তারা অভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আসার চেষ্টা করছে। তাদের পরিকল্পনা সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে জোটগতভাবে প্রার্থী দেওয়া। এ ঐক্য প্রক্রিয়ার মূল ভূমিকায় আছে জামায়াতে ইসলামী। বিভিন্ন দলের সঙ্গে তারা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের ভাষায় আলোচনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কিছু মতাদর্শগত পার্থক্য থাকায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছতে সময় লাগবে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হঠাৎ সামনে চলে আসে জামায়াতে ইসলামী। পতনের কয়েক দিন আগে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেই জামায়াতের নেতৃত্বে গঠন হচ্ছে ইসলামি জোট। জামায়াতের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেছে, বিএনপির সঙ্গে তাদের বনিবনা হওয়ার সম্ভাবনা কম। বিএনপি গত কয়েক বছর ধরে জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে। এক পর্যায়ে ২০ দলীয় জোটকে অকার্যকর করে দেয় বিএনপি। যেখানে জামায়াত ছিল বড় অংশীজন। সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে জামায়াতকে কৌশলে সাইডলাইনে রাখে বিএনপি। যুক্ত করা হয়নি যুগপৎ আন্দোলনে। বিএনপির বৈরী মনোভাবে জামায়াতের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নাখোশ হন। তারাই এখন মূল বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী নন। এ জন্য সমমনা ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর জোট গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জামায়াত নেতারা বলছেন, এখনই তাদের মোক্ষম সময়। আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে মাঠে নিজেদের সামনে আনতে চান। উদ্দেশ্য নির্বাচনে ইতিহাস সৃষ্টি করা। সে জন্য এখনই সারা দেশে মাঠে সরব হয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। মানবিক ও সামাজিক কর্মকা-ের মাধ্যমে জনমত তৈরির সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। জনমত ও সুবিধাজনক পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্বাচনে জোটের সিদ্ধান্ত নেবে দলটি। সূত্র জানায়, দেশে এখন ১১টি ইসলামপন্থি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধনের বিষয়টি আদালতের সিদ্ধান্তে আটকে আছে। ২০১৩ সালে হাইকোর্ট এ নিবন্ধন বাতিল করে। ঐক্য গড়তে জামায়াত ইতিমধ্যে ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিশ, ১২ দলীয় জোট, লেবার পার্টি ও হেফাজতে ইসলামের বেশ কেয়েকজন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছে।
খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আবদুল জলিল বলেন, আমাদের আলোচনা চলছে। ইতিমধ্যে জামায়াত, ইসলামি দলসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। শুধু নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের এ ঐক্য হবে। প্রতি সংসদীয় আসনে একজন এমপি প্রার্থী থাকবে ইসলামি জোটের। এমন সমঝোতার ভিত্তির ঐক্য হচ্ছে।
হেফাজতের নায়েবে আমির মুহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, আমরা অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে কোনো রাজনৈতিক কিংবা নির্বাচনি জোটে যেতে পারি না। তবে আমাদের সংগঠনের নেতারা বিভিন্ন ইসলামি দলের নেতৃত্বে আছেন। তারা জোট করতে পারেন। হেফাজতের পরামর্শ থাকবে বুঝেশুনে জোটে যাওয়া; যাতে বিতর্ক তৈরি না হয়।
হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী জানান, এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আলোচনা হয়নি। জামায়াতের সঙ্গে হেফাজতের আকিদাগত পার্থক্য রয়েছে। তবে আমাদের মূল উদ্দেশ্য ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করা।
জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের বাইরে ‘সমমনা ইসলামি দলগুলো’ নামে ছয়টি দলের একটি জোট আছে। এ জোটের শরিক দলগুলো হলো জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (মামুনুল হক), মুসলিম লীগ (আবুল খায়ের), খেলাফত মজলিস (আহমদ আবদুল কাদের), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও ইসলামী ঐক্য আন্দোলন।
সম্প্রতি ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করিম ও খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য গড়তে তাদের কোনো সমস্যা নেই। তবে তার আগে দলটির ধর্মীয় কিছু বিষয়ে মাওলানা মওদুদীর লেখা নিয়ে আলেমদের সঙ্গে যে বিরোধ, তার সমাধান করতে হবে।
ইসলামী আন্দোলনের যুগগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। নির্বাচন এখনও অনেক বাকি। তাই আলেচনা গতি মন্থর। আমাদের ঐক্যের মূল উদ্দেশ্য হলো কল্যাণ ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র কায়েম করা। এ ভিত্তিতে আমরা এক হওয়ার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ইসলামি রাষ্ট্র হবে কি না তা জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেন, নির্বাচনে সবাই-ই চায় ভালো রেজাল্ট করতে। যেভাবে ভালো রেজাল্ট পাওয়া সম্ভব আমরা সেভাবেই নির্বাচনে অংশ নেব। এ জন্যই আমরা সব দলের সঙ্গে স¤পর্ক রাখছি। বিএনপি, ইসলামি আন্দোলন, ১২ দলীয় জোট, খেলাফত মজলিশসহ সমমনা সব দলের সঙ্গে জামায়াতের আলাপ-আলোচনা চলছে। সরাসরি হেফাজতের সঙ্গে আলোচনায় না বসলেও তাদের নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে। তিনি বলেন, নির্বাচন এখনো অদূর ভবিষ্যতের আলাপ। তবে এখন থেকেই আমাদের প্রস্তুতি চলছে। এখন এক দল আরেক দলের কাছে যাচ্ছে। ইসলামের স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে। দলগুলোর মধ্যে মনস্তাত্বিক বোঝাপড়া বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। বিএনপির সঙ্গে আমরা স¤পর্ক রেখেছি। বিএনপিই ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতের সঙ্গে তাদের জোট নেই। আমরা কিন্তু কিছু বলিনি।
ঐক্য গঠন প্রসঙ্গে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, হ্যাঁ আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন দলের মতপার্থক্য আছে। পার্থক্য না থাকলে দেশে একটি দল থাকত। জোট গঠনের ক্ষেত্রে পার্থক্যগুলো কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। পার্থক্যগুলো নিজেদের জায়গায় রেখে ন্যূনতম সাধারণ কিছু ইস্যুতে ঐক্যের ফর্মুলা বের করা হচ্ছে। আলোচনা চলছে। দেশের কল্যাণে ফ্যাসিবাদের দোসরদের হাত থেকে রক্ষা পেতে যেটা ভালো হয় জামায়াত তাই
করবে। -সময়ের আলো