সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মান্নানকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে আনা হয়। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তাকে চিকিৎসকরা ভর্তি করার জন্য পরামর্শ দেন। ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শিশির রঞ্জন চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেন সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী। তিনি জানান, সাবেক মন্ত্রী এম এ মান্নানকে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। তিনি ডিভিশনপ্রাপ্ত হওয়ায় হাসপাতালেও ডিভিশন পেয়েছেন।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মান্নান শারীরিক অবস্থা ভালো থাকলেও কারাবন্দি অবস্থায় থাকায় ‘ডিপ্রেশনে’ ছিলেন। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে কারা হাসপাতালের চিকিৎসকরা সেখানে তাকে চিকিৎসাসেবা দেন।
গত ২ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নির্জন কুমার মিত্রের আদালতে দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের এরোয়াখাই গ্রামের হাফিজ আহমদ বাদী হয়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযাগে একটি মামলা করেন। মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট, সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, রণজিত চন্দ্র সরকার, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল, রেজাউল করিম শামীম, সুনামগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র নাদের বখতসহ ৯৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ২০০ জনকে আসামি করা হয়। এই মামলায় এম এ মান্নানকে ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে শান্তিগঞ্জ উপজেলার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরদিন আদালতে পাঠানো হয়। এরপর থেকে সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে ছিলেন। ২৩ সেপ্টেম্বর আদালতে তার জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু জামিন মঞ্জুর করা হয়নি।
সুনামগঞ্জ জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, কারাগারে থাকা অবস্থায় ৫ অক্টোবর সকালে এম এ মান্নান অসুস্থ বোধ করেন। পরে সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল নেওয়া হয়। সেখানের চিকিৎসকরা দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, এম এ মান্নান বয়স্ক মানুষ। শারীরিক নানা জটিলতা আছে। বহুদিন থেকে বুকে ও পেটে ব্যথার ওষুধ সেবন করেন। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বুঝেছেন শারীরিক সমস্যার চেয়ে মানসিক সমস্যা বেশি। একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার। এছাড়া এখানে বক্ষব্যাধির কোনও বিশেষজ্ঞ নেই। তাই সিলেটে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ কারাগারের জেলার হুমায়ুন কবীর বলেন, আমরা তাকে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন সিলেটে নেওয়ার। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিলেটে পাঠানো হয়েছে।
সিলেট জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে এম এ মান্নানকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বদল হয়। নেওয়া হয় সিলেট কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতালে।
সর্বশেষ রবিবার (৬ অক্টোবর) এম এ মান্নানের জামিন নামঞ্জুর করেন আদালত। এদিন তার পক্ষে সুনামগঞ্জের দ্রুতবিচার আদালতে জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী। শুনানি শেষে বিচারক নির্জন কুমার মিত্র জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এম এ মান্নানের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম বলেন, এম এ মান্নান বয়স্ক মানুষ। আমরা তার শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা বিবেচনা করে জামিনের আবেদন করেছিলাম। শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর আরেকবার জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। তখনও জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন বিচারক।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরে গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী জহুর আহমদের ভাই জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা হাফিজ আহমদ বাদী হয়ে ২ সেপ্টেম্বর সদর মডেল থানায় দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা করেন। মামলায় এম এ মান্নানসহ ৯৯ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি আছেন আরও ১৫০ থেকে ২০০ জন। তবে এখন পর্যন্ত এম এম মান্নান ছাড়া এই মামলার এজাহারনামীয় আর কোনও আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ ও মুক্তির দাবিতে শান্তিগঞ্জে সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে, তার শাস্তির দাবিতে শান্তিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ শহরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা একাধিকবার বিক্ষোভ করেছেন।