সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আগামী ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। শুভ মহালয়ায় দেবীর আহ্বান শেষে এখন ম-পে-ম-পে দেবী বরণের প্রস্তুতি চলছে। কৈলাশ থেকে মর্ত্যলোকে আসবেন দেবী দুর্গা। এই উৎসব ঘিরে সারা দেশের ম-পে-ম-পে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রতিমা তৈরিতে মাটির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন রং-তুলির আঁচড় শেষে প্রতিমা ম-পে নেওয়ার অপেক্ষায় সবাই। তাই ব্যস্ততায় দিন-রাত এক করে ফেলছেন প্রতিমাশিল্পীরা। দম ফেলার সময় নেই প্রতিমা শিল্পী ও আয়োজকদের।
এদিকে পূজায় মন্দিরে আগত দর্শনার্থীদের নজর কাড়তে, সাজসজ্জায় নানা উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন মন্দিরে এখন চলছে থিমভিত্তিক সাজসজ্জার কাজ। সারা দেশে বইছে উৎসবের আমেজ। সায়ংকালে ধূপের ধোঁয়া, ঢাক-ঢোল, উলুধ্বনি আর কাঁসর-মন্দিরার সঙ্গে ভক্তিমন্ত্রে মেতে উঠবে পূজাম-প।
আগামী ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গোৎসব। এরপর মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী ও দশমীতে (১৩ অক্টোবর) বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসবের শেষ হবে। এ বছর দেবী দুর্গা মর্তে আগমন করবেন দোলায় আর ঘোড়ায় চড়েই তিনি ফিরে যাবেন স্বর্গলোকে। সরকারি হিসেবে সারা দেশে এ বছর ৩২ হাজার ৬৬৬টি মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে।
হিন্দু শাস্ত্র মতে, মহালয়া তিথিতে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে (পৃথিবীতে) আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ দিন ভোরে চ-ীপাঠের মধ্য দিয়েই মর্ত্যলোকে দেবী দুর্গাকে এ আমন্ত্রণ জানানো হয়। আর এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।
পূজাকে সামনে রেখে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনগুলো প্রস্তুতিমূলক সভা করেছে। পূজা ম-পের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখা ও প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরকার তার প্রস্তুতি স¤পন্ন করেছে। পূজার প্রস্তুতি নিয়ে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাগণ বৈঠক করেছেন। এতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটিসহ বিভিন্ন অংশীজনরাও অংশ নিয়েছে।
রমনা কালী মন্দিরের পুরোহিত হরিচাঁদ চক্রবর্তী বলেন, আগামী ৯ অক্টোবর সকাল ৮টা ৪৪ সেকেন্ডের মধ্যে মহাষষ্ঠী কল্পনারম্ভ শেষ করতে হবে। শায়নকালে দেবীর অধিবাস ও আমন্ত্রণ। ১০ অক্টোবর সকাল ৭টা ৫৩ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের মধ্যে দেবীর মহাসপ্তমী পূজা শেষ করতে হবে। ১১ অক্টোবর সকাল ৬ টা ৫২ মিনিটের মধ্যে মহাষ্টমী পূজা ও ৬ টা ৫২ মিনিটে আরম্ভ এরপরেই কুমারী পূজা। পরে ৭ টা ৪১ মিনিটের মধ্যে সন্ধী পূজা শেষ করতে হবে। ওইদিনই সকাল ৭টা ৪১ মিনিট পর মহানবমী আরম্ভ ও ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে মহানবমীর বিহিত পূজা শেষ করতে হবে। ১২ অক্টোবর ৬টা ১২ মিনিটের মধ্যে মহানবমীর বিহিত অধিক পূজা শেষ করতে হবে। একই দিন সকাল ৭টা ৩৭ গতে পূর্বাহ্নের মধ্যে দশমী পূজা সমাপনান্তে বিসর্জন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, পূজার প্রস্তুতি এখন প্রায় স¤পন্ন। সারা দেশেই কেন্দ্রীয় ও প্রান্তিকপর্যায়ে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে পূজার। ইতোমধ্যে আমরা সারাদেশে নির্দেশনা দিয়েছি ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্য বজায় রেখে পূজা করার জন্য। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে পূজার সঙ্গে স¤পৃক্ত করতে। ইতোমধ্যে সরকারের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। সেখানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ আইজিপি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, পূজাকে ঘিরে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। এমনকি প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
প্রত্যেকটি পূজামন্ডপে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, সবার মধ্যে আস্থার মনোভাব রয়েছে। আশা করছি, শারদীয় দুর্গোৎসবে কোনো সমস্যা হবে না। সারা দেশে সরকারি হিসেব মতে, ৩২ হাজার ৬৬৬টি মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হবে।