শহীদনূর আহমেদ ::
নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে সুনামগঞ্জ জেলা শহরসহ সকল উপজেলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন বা অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ করে রাখা হচ্ছে গুদামে। ফলে বাড়ছে বিস্ফোরণে অগ্নিকা-ের ঝুঁকি। লাইসেন্সবিহীন এই গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসা পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকলেও এটি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ শহরতলির রাধানগর পয়েন্ট এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডারের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের কয়েক ঘণ্টা প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও ক্ষতি হয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকার। এই অগ্নিকা-ের ঘটনায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, রাধারনগর পয়েন্টের মতো জেলা শহর ও উপজেলা শহরে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারে ডিলারের ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন অনেকেই। যাদের অনেকেরই ফায়ারসার্ভিস কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেই। তাছাড়া তারা যেসব গুদামে গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ করে রাখেন সেখানে নেই পর্যাপ্ত অগ্নির্নিবাপণ ব্যবস্থা। তাদের অগ্নিকা- নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো ধরনের দক্ষতা। শহর কিংবা উপজেলা হাটবাজারে যত্রতত্র এই ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডার ব্যবসা পাল্লা দিয়ের বাড়তে থাকলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এর কোনো বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের ঘটনা এড়াতে ব্যবসায়ীদের নজরদারির আওতায় নিয়ে আসতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সচেতনমহল।
সুনামগঞ্জ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম সাইদ বলেন, জেলা শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসা। যারা ব্যবসা করছেন তাদের বেশিরভাগেরই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেই। ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসলেও ব্যবসায়ীদের অগ্নিনির্বাপণের প্রশিক্ষণ নেই। নেই আগুন নেভানোর সরঞ্জাম। এসব গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের যথাযথ মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। লাইসেন্স ছাড়া যাতে কেউ এমন ব্যবসায় জড়িত হতে না পারে সেক্ষেত্রে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
গণমাধ্যমকর্মী ফরিদ মিয়া বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ও মেয়াদ উত্তীর্ণ সিলিন্ডার অনেক অগ্নিকা-ের কারণ। ব্যবসায়ীদের লাইসেন্সের পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যারা নিয়ম মানবে না, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
সুনামগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর সুবল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, রাধানগর পয়েন্টে গ্যাস সিলিন্ডারের যে গুদামে অগ্নিকা- হয়েছিল সেটির কোনো অনুমোদন ছিল না। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপণের কোনো সরঞ্জাম ছিলনা। এই অগ্নিকা-ের ঘটনার বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি।
গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স ও প্রশিক্ষণের আওতায় আনার পাশাপাশি আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক বলেন, যারা গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা করবেন তাদের অবশ্যই ফায়ার কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিতে হবে। দোকানে অবশ্যই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে। যারা এমনটার বিপরীত করবেন তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।